বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
পটুয়াখালীর দুমকিতে ইমামের গরু লুট মামলার ২ আসামি আটক পটুয়াখালীর দুমকিতে মসজিদের ইমামের গরু লুট পটুয়াখালী ইটবাড়িয়ার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গ্রেফতার পটুখালীর দুমকিতে অবৈধভাবে জমি দখল করে প্রতিপক্ষকে হয়রানীর অভিযোগ : ভুক্তভোগীর সংবাদ সম্মেলন আশুলিয়ায় জুলাই ঘোষণাপত্র ও ৭ দফা দাবিতে লিফলেট বিতরণ পটুয়াখালীর দুমকিতে গোয়ালঘরে আগুন : বসতি ঘর সহ ৪টি গরু আগুনে পুড়ে ছাই আশুলিয়া ভাড়াটিয়াকে ধর্ষণ অভিযোগ উঠেছে বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় যুবলীগ নেতা হাসান আবারো বেপরোয়া : থেমে নেই চাঁদাবাজি বিশ্ব কন্যা শিশু দিবসে নেলসন ম্যান্ডেলা পিস এ্যাওয়ার্ড পেলেন সাংবাদিক এম শিমুল খান বিআরটিসির চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলামের কারনে ঘরে বসেই বকেয়া বুঝে পাচ্ছেন বিআরটিসির অবসরপ্রাপ্তরা

নেশায় ঝুঁকছে অবহেলিত পথশিশুরা,দেখার কেউ নেই তাদের!!

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২
  • ৪৪৫ Time View

মোঃ রাসেল সরকার: ওদের বয়স বেশি নয়। ১০ থেকে ১২। ওরা পথশিশু। ওরা সংখ্যাও কম নয়। প্রায় দলবেধেই ওদের চলাফেরা করতে দেখা যায় রাস্তার পাশে। কখনো আবর্জনার স্তূপ থেকে প্লাস্টিক, কাঁচ, লোহা ও বোতল থেকে শুরু করে ফেলে দেয়া অনেক বস্তু কুঁড়াতে দেখা যায়।দলবেধে যেমন কাজ করে, তেমনি দুষ্টামিও করে দলবেধে। ওদের একজনের সাথে অপরজনের অনেক সখ্যতা। ছুটোছুটিতেই মেতে থাকা তাদের স্বভাব। নেই কোন ক্লান্তি। কার বাড়ি কোথায়, জানা নেই অনেকেরই।

তবে সরেজমিনে দেখা যায় কিছুটা ভিন্নতা। স্বভাবে এসেছে পরিবর্তন। ছুটোছুটির বা কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলেই আড়ালে বসে পলিথিন কিংবা কাগজের মোড়কে মুখ ডুবিয়ে শ্বাস নেয় তারা। ধারণা করার কোন কারণ নেই যে, কেবলই কাগজ কিংবা পলিথিনের ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত এসব শিশুরা। দেখে বোঝার কোন উপায় নেই তিন চারজন একসাথে বসে কি করছে। সকলের বয়সই খুব কম।কয়েকদিন আগে কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশে একটি যুপপায় বসে কয়েকজন পথশিশু পলিথিনে মুখ লুকিয়ে কি যেন করেছে। তাদের জিজ্ঞেস করতেই সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। জানা যায়, তারা সকলেই ড্যান্ডি নামক নেশা করছে। এটি আঠা জাতীয়।

সুমন নামে ১২ বছরের এক পথশিশু জানায়, জুতা, কাঠ, ফার্নিচার ও টায়ারের দোকানে ব্যবহৃত-অব্যবহৃত বিভিন্ন আঠার কৌটা কিনে নেয় তারা। সেই কৌটা থেকে আঠার ঘ্রাণ নিতেই তাদের যত প্রশান্তি। আর সেটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।এভাবেই অবহেলা-অযত্নে থাকার কারণে এসব শিশুরা ধীরে ধীরে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে। তারা কখন বাড়ি থেকে বের হয় আর কোথায় থাকে, তাদের পরিবারও তা জানে না এবং তাদের কে দেখারও কেউ নেই।

ওদেরও স্বপ্ন আছে, আছে ইচ্ছা ও সাধ। তবে বাস্তবতা ওদেরকে করেছে বিপথগামী। ওরা বেশিরভাগই বাবা-মা ও অভিভাবকহীন। আবার অনেকের বাবা-মা থাকার পরও ঠিকমতো দেখভাল না করায় তারাও বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে। তাই সমাজের অনেকেই ওদেরকে দেখছে ভিন্ন চোখে।যে বয়সে বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সে জীবিকার সন্ধানে বস্তা হাতে নিয়ে কুঁড়িয়ে বেড়াচ্ছে ভাঙারি হিসেবে পরিচিত ফেলে দেয়া বস্তু। এসব বিক্রি করে চলে তাদের জীবন-সংসার। এমনি করে নোংরা পাত্র কুঁড়াতে কুঁড়াতে আসক্ত হচ্ছে আঠা বা ড্যান্ডি নামক নেশায়। বিড়ি, সিগারেট, পান তাদের কাছে সাধারণ বিষয়। এগুলো তাদের ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে ঘুমানো পর্যন্ত চলতেই থাকে।

কালাম,আজাদ,বাবু,রনি ও ফিরুজ নামে প্রায় ছয়-সাতজন পথশিশুর সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কেউ দ্বিতীয় শ্রেণির ওপরে পড়াশোনা করেনি।অনেকের বাবা চালায় রিকশা, মা করেন কারখানায় চাকরি। পরিবারে তাদের দেখার কেউ নেই। বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক আনার জন্য পলাশ পরিবহনে কাজ করে রনি। অনেকে সিএনজির হেলপার হিসেবে কাজ করেন। কয়েকজন বোতল ও কাগজ কুঁড়ায়।

শৈশবে বঞ্চিত ‘সুখ’ এর প্রত্যাশায় অন্ধকারের চোরাবালিতে এসব শিশুরা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে ওদের জীবন। পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ার কারণে তারা যানবাহনের হেলপার, কেউ বিভিন্ন গাড়ির গ্যারেজে কাজ করছে। কোন কাজের কৈফিয়ত না দেয়ার কারণে ওরা নিজেদের মতো করে জীবন কাটিয়ে থাকে। ওদের বেশিরভাগই ড্যান্ডির নেশায় আসক্ত।

সারাদিন পরিশ্রম শেষে নিজেকে ক্লান্তি থেকে বাঁচতে বা ময়লা তুলতে হাত পা কেটে যাওয়ার ব্যথা অনুভব থেকে রক্ষা পেতেও নেশা করে থাকে এসব শিশুরা। এমনটাই জানায় ওই শিশুরা।এক পথশিশু জানায়, প্রথম প্রথম গন্ধটা নিলে শরীর শীতল মনে হতো। এখন কেমন যেন ঝিমঝিম ভাব আসে। অনেক ঘুমও এসে যায়। সাইকেলের গ্যারেজ, পানের দোকান, ফার্নিচার বা মহল্লার জুতার দোকান থেকে ৩০-৩৫ টাকায় কেনা যায় একটি আঠার কৌটা।এ সময় ওই শিশুর কথা শুনে বাকিরা কথা বলতে মানা করে সেখান থেকে দৌড়ে চলে যায়।

এসব পথশিশুদের নেশার তালিকায় রয়েছে গাঁজা, সিরিঞ্জ, ঘুমের ওষুধ ও পলিথিনের মধ্যে আঠা শুকে নেশা করা। ওরা নিয়মিতই এসব নেশা করে থাকে। এসব নেশা করার সময় অনেকে মারধরও করে তাদের।কাজল নামের এক চায়ের দোকানদার বলেন, ওরা সারাদিন কাগজ কুঁড়ায়। অনেকে আবার গাড়ির হেরপারি করে। চা, পান, বিড়ি ও সিগারেট সব খায়।আমি কয়েকদিন আগে কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশে পলিথিনে নেশা করতে দেখেছি। কি করে তারা- জিজ্ঞেস করতেই সাত-আটজন দৌড়ে পালিয়ে যায়।

কয়েকজন পথচারী বলেন, সারাদিন কাগজ কুঁড়িয়ে, যাত্রীদের বহন করে যে টাকা আয় হয় তার একটা বড় অংশ ব্যয় হয় মাদকের পেছনে। ওদের জমা-খরচ বলতে কিছু নেই। এসব শিশুরা মানুষের বাসা-বাড়িতে সুযোগ পেলেই চুরি করে। একসময় এই শিশুরা ধীরে ধীরে কিশোর গ্যাং দলের সক্রিয় সদস্য হয় যায়।অবহেলিত পথশিশুদের সম্পর্কে স্থানীয় একজন ব্যক্তি বলেন, পথশিশুরা অধিকাংশই জন্মের পর থেকেই পরিবারের ভালোবাসা পায় না। এর ফলে ধীরে ধীরে পরিবারের সাথে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ে তারা। আলোর দেখা পাওয়ার আগেই তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও নেশার সাথে জড়িয়ে পড়ে। আর তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। তাই সন্তানদের শুরুতেই সু-শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলেন, শিশুরা নেশাগ্রস্ত হলে শারীরিক ও সামাজিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকের ফলে কিডনি, লিভার, পাকস্থলী ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। কোষ্ঠকাঠিন্য, খাবারে অরুচিসহ সংক্রামক নানা রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 agamirbangladesh24.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin