আমেনা ইসলামঃ সারারাত জল্পনা কল্পনা শেষে একটি মাইক্রো যোগে একঝাক সাংবাদিক খুব ভোরে রওনা দিলাম নরসিংদীর উদ্দেশ্যে। লক্ষ লটকনের আদিপান্ত দেখে ও বুঝে নেওয়া। আমাদের মধ্যে অনেকে ছিলাম লটকনের বাগানের প্রথম অতিথী। এর আগে অনেকেই লটকনের বাগান দেখার সুযোগ হয়নি। প্রথম বলেই বিস্ময় ছিলো আকাশ ছোয়া, গ্রামের পিচঢালা পথ ধরতেই মন ভালো হয়ে যায়। আহ, কী সুন্দর! মনে হবে চারিদিকে সবুজের চাদর বিছানো। যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার না ।
সরাসরি কান্ড থেকে বের হওয়া লটকনের গাছ দেখতে খুবই সুন্দর। তাই লটকন মৌসুমে নরসিংদী এলাকার রায়পুরা ও শিবপুরের বিভিন্ন এলাকায় লটকন বাগানে ভ্রমণ রসিকদের ভিড় জমে। স্থানীয় প্রতিনিধী ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম লিটন শুরু থেকে আমাদের সংগেছিলেন। সরাসরি লটকনের বাগানে পৌছাতে আমাদের কোন বেগ পেতে হয়নি। যদিও স্থানীয়ভাবে লটকনকে বগি বলে ডাকে। তাদের সংগে কথা বলে জানা গেলো এই এলাকায় কাঁঠাল এক সময় প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল, এখন সে জায়গা দখল করে নিয়েছে লটকন।
বৃষ্টি নেই, আকাশ একদম পরিষ্কার। রোদ তার সাধ্যমত উত্তাপ ছড়াচ্ছে । তবুও যেন মেঘে ভেসে চলেছি আমরা। থোকায় থোকায় লটকন পুরো গাছ জড়িয়ে আছে। আমরা এক গাছ থেকে আরেক গাছ তারপর আরেক গাছে ছুটে চলছিলাম, অসাধারন সে দৃশ্য। সহকর্মীরা যখন বাগান থেকে ছিড়ে লটকন খাচ্ছিল সে দৃশ্য কখনোই ভুলার নয়।
তবে এখানে ‘ভিউ পয়েন্ট’ বলে কিছু নেই। দুচোখ বিস্তৃত করলেই প্রাণ ভরে উপভোগ করা যায় লটকনের সৌন্দর্য। আমরা লটকনের দিকে মন্ত্রমগ্ধের মতো তাকিয়ে রইলাম। আমাদের দেখে বাগান মালিক ছুটে এলেন। তার উচ্ছাসও ছিলো চোখে পরার মতো। তার সংগে কথা বলে জানা গেল, এটি একটি বুনো গাছ। এখানে প্রতি বছরই বাড়ছে লটকন চাষ। খুব একটা যত্ন নিতে হয় না গাছের। তবুও লটকন গাছ বেড়ে ওঠে তরতর করে। প্রতি বছর গ্রীষ্ম-বর্ষায় ফল দেয়। অল্প খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় অনেক কৃষকই ঝুঁকছেন লটকন চাষে। লটকন চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্যও পেয়েছে অনেকে। এছাড়া এই লটকন দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানী হচ্ছে দেশের সীমানা পেড়িয়ে বিদেশেও। আকারে বড়, রং সুন্দর ও সুস্বাদু হওয়ায় এই নরসিংদীর লটকনের চাহিদাটা একটু বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লটকন চাষ হয় শিবপুর উপজেলায়। সুস্বাদু লটকন ঔষধিগুণ সম্পন্ন হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়ায় দিনে দিনে এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। যেহেতু বাগান পরিচর্যায় খরচ কম তাই লাভের অংশ একেবারেই কম নয় জানালেন বাগান মালিক। বাজারে আকার ভেদে প্রতি কেজি লটকন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
তবে মজার ব্যাপার হলো লটকন এলাকায় রোদ পৌঁছতে পারছিল না, একেকটা লটকন গাছ লাগানো হয়েছে খুব ঘন কওে নয়, তবে প্রতিটা গাছই অনেক ঝোপালো, আর একটি গাছ ১২ থেকে ১৫ মিটারের বেশি উচ্চতার ছিল না। পুরো এলাকা ছায়াঘেরা,সত্যিই ভালো লাগার মতই। লটকনের ঘোরেই কেটে গেল সারাটা সময়, সময় গড়িয়ে বিকেল চারটা প্রায় , সহকর্মী লিটন ভাই বেলাবোর একটা হোটেলে খাবার খাওয়ালেন, স্থানীয় বাজার থেকে সবার জন্য লটকন উপহার দিয়ে আমাদের নিয়ে গন্তব্যে।