নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করে যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দল এবং সরকারের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য তাকে অবিলম্বে মন্ত্রিপরিষদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া দরকার। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানা গেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করছেন যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী যদি আর কিছুদিন থাকেন তাহলে আরও বেফাঁস এবং বেসামাল, অযৌক্তিক, অনভিপ্রেত কথাবার্তা বলবেন এবং এর ফলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একের পর এক বক্তব্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারছে না। তারা মনে করছে যে, এটি শুধুমাত্র স্বাভাবিক বাচালতা নয়, বরং এর পিছনে সুগভীর একটি ষড়যন্ত্র রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা, সে নিয়েও আওয়ামী লীগের নেতারা সন্দেহ প্রকাশ করছেন। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী একজন মন্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়া এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় একজন মন্ত্রী নিয়োগপ্রাপ্ত হন। একই সঙ্গে সংবিধানে একজন মন্ত্রীর পদত্যাগের ক্ষেত্রে দু’ধরনের পথ রয়েছে। একটি হলো তিনি স্বেচ্ছায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে পদত্যাগ করতে পারেন, অন্যটি হলো প্রধানমন্ত্রী কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেই বক্তব্য তিনি প্রত্যাহার করেননি। বরং এই বক্তব্যের পুরো দায় গণমাধ্যমের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, কিছু দুষ্টু লোক তিলকে তাল করে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শহরের জেমসন হলে জন্মাষ্টমীর উৎসবে তিনি বলেছিলেন, আমি ভারতে গিয়ে বলেছি শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আর গত শুক্রবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের পক্ষে গোপালগঞ্জে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে তার কাছে কিছু জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বলেছি কিছু লোক সময়ে সময়ে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলেন। আপনার দেশেও কিছু দুষ্টু লোক আছে, আমার দেশেও দুষ্টু লোক আছে। তারা তিলকে তাল করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি বলছেন সেটি তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না বলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মনে করছেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কথাবার্তায় তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন এবং তার কথাবার্তা বন্ধ হওয়া উচিত। আওয়ামী লীগের অন্য একজন সদস্য বলেছেন যে, এই মুহূর্তেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সরে যাওয়া উচিত। কিন্তু তিনি নিজের ইচ্ছায় সরে যাবেন না বলে আমার মনে হয়। ওই নেতা বলেন যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী যদি নিজের ভুল বুঝতে পারতেন তাহলে পরে তিনি নিজেই সরে যেতেন। উল্লেখ্য যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিতর্কিত বক্তব্য এটিই প্রথম নয়। এর আগে তিনি বলেছিলেন যে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো। তখন এই বক্তব্য নিয়েও ভারত এবং বাংলাদেশের কূটনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলছেন যে, এখন সময়টা অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং সরকারকে অনেক রকম চাপে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তার মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য অত্যন্ত আপত্তিকর এবং মর্মান্তিক। একটি বক্তব্য দিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের বড় ক্ষতি করেছেন, সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য আমাকে হতবাক করেছে। তিনি এ ধরনের বক্তব্য দেয়ার পর কিভাবে মন্ত্রী থাকেন সেটি আমার কাছে বড় প্রশ্ন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য দলের বা সরকারের বক্তব্য নয়। কিন্তু ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যে পর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন যে, এ ধরনের বক্তব্যই যথেষ্ট নয়। বরং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে একটিমাত্র পথ খোলা রয়েছে, তা হলো তার অব্যাহতি অথবা তিনি যদি নিজে বুঝতে পারেন যে তিনি অন্যায় করেছেন, তিনি একটি গর্হিত কাজ করেছেন, এই বুঝে যদি তিনি পদত্যাগ করেন সেটা তার জন্য মঙ্গলজনক হবে। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন আর কোনো লুকোচুরি করছেন না। বরং প্রকাশ্যে তার সমালোচনা করছেন এবং প্রকাশ্যেই মনে করছেন তার সরে যাওয়াটাই সকলের জন্য উত্তম।