নিজস্ব প্রতিবেদক: আ ক ম মোজাম্মেল হক এখন সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। শুধু তাই নয় বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর পর মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠতার তালিকায় তিনি শীর্ষে রয়েছেন। সিনিয়র মন্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন রকম দায়িত্ব পালন করেন তিনি। গাজীপুর-১ আসন থেকে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার প্রবীণতম সদস্য বটে। সাম্প্রতিক সময়ে যখন রাষ্ট্রপতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তখন আ ক ম মোজাম্মেল হকের নামও বিভিন্নভাবে আলোচিত হচ্ছে। মোজাম্মেল হক আগামী রাষ্ট্রপতি হতে পারেন কিংবা রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে তিনিও রয়েছেন, এমন কথা আওয়ামী লীগ অঙ্গনে চাউর হয়েছে। বিশেষ করে আ ক ম মোজাম্মেল হকের নির্বাচনী এলাকায় তাঁর রাষ্ট্রপতি হওয়ার কথাটি বেশ জোরেশোরেই আলোচনা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী বছর এপ্রিল মাসে। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সরকারকে একজন নতুন রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করতে হবে। একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। সেই বিবেচনায় আওয়ামী লীগকেই আগামী রাষ্ট্রপতি কে হবে, এটি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে হবে এবং এটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বলে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। কে রাষ্ট্রপতি হবেন, এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানামুখী জল্পনা-কল্পনা চলছে। প্রকাশ্যে এ নিয়ে কেউ কোনো কথা না বললেও গোপনে গোপনে অনেকেই রাষ্ট্রপতি হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, অনেকেই তাঁর এলাকায় তার ঘনিষ্ঠজনকে বলেছেন যে, তার রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন যে, রাষ্ট্রপতি কে হবেন, এই বিষয়টি সিদ্ধান্ত গ্রহণের একক এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি যাকে মনে করবেন, তিনিই রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত হবেন। তবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে কোনো রাজনীতিবিদ হবেন নাকি কোনো বিজ্ঞজনকে করা হবে, সেটির ব্যাপারেও কেউ কোনো নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেনি। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহলে রাষ্ট্রপতি নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। এই আলোচনার মধ্যে আ ক ম মোজাম্মেল হকের নামও উঠে এসেছে।
আ ক ম মোজাম্মেল হক ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পান। এর আগে তিনি গাজীপুরের পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মোজাম্মেল হকের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিলো ছাত্রলীগের মাধ্যমে এবং তিনি গাজীপুর মহাকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত তিনি তিনবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৯ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত চারবার পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং মেয়র নির্বাচিত হন। এছাড়াও ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব বিভিন্ন মেয়াদে পালন করেছেন। ২০০৮ সালে পৌর মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে তিনি গাজীপুর-১ আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ওই নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন। এরপর ২০১৪ এবং ২০০৯ সালের নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন।
২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় তাকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে তিনি রাজাকারের তালিকা, মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ইত্যাদি নিয়ে নানারকম বিতর্কিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। তবে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালনে তেমন বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করেননি। অনেকেই মনে করেন যে, দীর্ঘদিন রাজনীতির মধ্যে বেড়ে ওঠা এবং তৃণমূল থেকে উঠে আসার কারণে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি বিবেচিত হলেও হতে পারেন। তবে অনেকেই মনে করছেন যে, আগামী নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য সরকার হয়তো আরও গুরুত্বপূর্ণ কাউকে বিচার-বিবেচনা করবেন। তবে রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন, এই আলোচনায় যে আ ক ম মোজাম্মেল ভালোভাবেই আছেন এখন পর্যন্ত তা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ঘরোয়া বৈঠকে গেলেই বোঝা যায়।