এম নাসির উদ্দীন খান রিপন: রোপা আমন ধান রোপণের সময় শ্রাবণ-ভাদ্র মাস। কিন্তু ভাদ্রের শেষ দিকে এসেও খুলনায় লক্ষ্যমাত্রার ৭৩.১৭ শতাংশ জমি অনাবাদি রয়ে গেছে। মাত্র ২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ জমিতে ধান রোপণ হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির না হওয়ায় পানির অভাবে ধান রোপণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষি অফিস থেকে নদীর পানি ব্যবহারের পরামর্শ দিলেও লবণাক্ততা ও বাড়তি খরচের কথা বলছেন তারা। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় জুন-আগস্ট পর্যন্ত ৩৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গত বছর এ তিন মাসে ১ হাজার ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। চৈত্র ও বৈশাখের ন্যায় দাবদাহ চলছে। তাপমাত্রা ৩৭-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। স্বস্তির আবহাওয়া পেতে আরও এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে।
জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, জেলার ৯৩ হাজার ১৭০ হেক্টর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে ধান রোপণ হয়েছে। এক হাজার ৩১৬ হেক্টর জমির পাট পচাতে যেয়ে ছোটখাটো চৌবাচ্চা ব্যবহার করতে হচ্ছে। ৩ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমির আউশ ধান মাঠে মারা যাচ্ছে। তরমুজ, কাঁচামরিচ, হলুদ, আদা, কচুরমুখি, মিষ্টি কুমড়া, চিচিঙ্গা ও শীতকালীন অন্য শাক সবজির ভূমি সতেজতা হারিয়েছে।
খুলনার কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের মসজিদ কুড় গ্রামের আমন চাষি শেখ সিরাজুল ইসলাম, আবু রায়হান মাসুদ, হৃদয় কৃষ্ণ পাল বলেন, সময় মতো যদি ফোঁড় না দেওয়া যায়, তাহলে অসময়ের ফোঁড়ে কোনো কাজ হয় না। এখানে ৯০০ বিঘা জমি রয়েছে। বর্ষার অভাবে এখনো ৫০ বিঘা জমিও চাষ হয়নি। যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে এ বছর আর আমন ধান ঘরে তোলা লাগবে না। শুকনো মাটি ভিজতে পারে শুধু বৃষ্টির পানিতে। সেচ দিয়ে এ সময়ে খুব বেশি ভালো ফলন আশা করা যায় না।
তারা আরও বলেন, ‘আমাদের এলাকা লবণাক্ত। এখানে বৃষ্টিই একমাত্র ভরসা। কৃষি অফিস থেকে নদীর পানি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নদীর পানিও তো লবণ। লবণ পানি দিয়ে আমন ধান চাষ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সেচ দিয়ে ধান চাষ করলে তা ভালো নাও হতে পারে। আর তাতে খরচ বাড়বে। যে পরিমাণ ধান পাবো, তা দিয়ে খরচ পোষানো যাবে না।
কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের জুলাই-আগস্ট মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলার অধিকাংশ নদ-নদী, খাল, গভীর ও অগভীর নলকূপের পানি লবণাক্ততার কারণে আমন আবাদের জন্য নিরাপদ নয়। কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ নদ সংলগ্ন উত্তর বেদকাশি, লালুয়া বাগালী, দক্ষিণ বেদকাশি, জালিরহাট, ঝিলাবাড়ি, মহেশ্বরীপুর, মদিনাবাদ, কয়রা, আমাদি, চাঁদ আলী, পাইকগাছা উপজেলা সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের বাকা বাজার, রাড়ুলী, আমতলা, লস্কর, মাহমুদ কাঠি, হরিঢালী, চাঁদখালী বাজার, কপিলমুনি বাজার, ভদ্রা নদী সংলগ্ন দেলুটি, শিবসা নদী সংলগ্ন গড়ুইখালী, বেতবুনিয়া ও শোলাদানা নদীর পানি আমন চাষের উপযোগী নয়। এসব এলাকার পানি লবণাক্ততা বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার প্রকৌশলী দিপংকর বালা বলেন, খুলনার ৯ উপজেলার মধ্যে কয়রা ও পাইকগাছার নদ-নদীর পানি অতিরিক্ত লবণাক্ত। বাকি সাত উপজেলার রূপসা, আঠারোবেকি, ভৈরব, আত্রাই, চিত্রা, শোলমারি, ভদ্রা, বাগমারা, কাজিবাছা, নারায়ণখালি, ঝপঝপিয়া, গ্যাংরাইল, নলুয়া, পশুর, চুনকুড়ি, ঢাকি, শিবসা, মোংলা, খুদে, লাউডোব, চরানদী, ময়ূর, তলার খাল ও বুড়ি ডাবর খালের পানি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব উপজেলায় উল্লিখিত নদী-খালে ভাটার সময় লবণাক্ততা কমে যায়। ফলে রূপসা উপজেলার তিলক, শিয়ালী, শ্রীফলতলা, দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর, কোলা বাজার, তেরখাদা উপজেলার মধুপুর, শাচিয়াদাহ, আজগড়া, ছাগলাদাহ, ফুলতলা উপজেলার আটরা গিলেতলা, ডুমুরিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর, শোভনা, গুটুদিয়া, বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালি, গংগারামপুর, দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা, বানিশান্তা, লাউডোব ও পানখালি এলাকার আমন ক্ষেতে নদীর নিরাপদ পানি দেওয়া সম্ভব হবে।