নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অঙ্গনে যে অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক চাপ সবকিছুর মূল লক্ষ্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরেই বিভিন্ন মহল সক্রিয় হচ্ছে, বিভিন্ন পথে এগোচ্ছে। সব মহলের শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য হলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করা। আর সে লক্ষ্যেই ধাপে ধাপে সুশীল সমাজ, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এবং যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী কাজ করছে বলে ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে সক্রিয় হয়েছে সুশীল সমাজ। সুশীল সমাজ গত কিছুদিন ধরেই সরকারের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রচারে নেমেছে। এই প্রচারের পাঁচটি দিক রয়েছে।
প্রথমত, সুশীল সমাজ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে কথা বলছে এবং একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, সুশীল সমাজ বলছে আগামী দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যেই সংকট দৃশ্যমান হবে। অর্থাৎ নির্বাচনের আগে যেন জনগণের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি, ভীতি এবং আওয়ামী লীগবিরোধী মনোভাব কাজ করে সেজন্যই এই প্রচারণা তীব্র করা হয়েছে। সুশীল সমাজের প্রচারণার দ্বিতীয় দিক হলো, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি। মানবাধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন যেন সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। সেই চাপ ইতোমধ্যে সরকার অনুভব করতে পারছে। বিশেষ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের বাংলাদেশ সফরের পর বাংলাদেশের মানবাধিকার যে আগামী নির্বাচনে একটি বড় ইস্যু হবে তা সুস্পষ্ট হয়েছে। সুশীলরা তৃতীয় যে বিষয়টি নিয়ে বেশি করে কথা বলছে তা হলো, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, অর্থবহ নির্বাচন হওয়া এবং ওই নির্বাচনে যেন সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে তা নিশ্চিত করা। সেক্ষেত্রেও সুশীলরা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখছে এবং অনেকখানি এগিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে বলে ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনকে বিভক্ত করেছে। আওয়ামী লীগ এবং জাসদ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দলই ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণকে সমর্থন করেনি। আর ইভিএমবিরোধী প্রচারণার মূলে রয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার দীর্ঘদিন ধরেই এই ইভিএম বিরোধী প্রচারণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং তার সঙ্গে অন্যান্য সুশীলরাও যুক্ত হয়েছে। ফলে নির্বাচনের আগে ইভিএম একটি বড় ধরনের ইস্যু হিসেবে আওয়ামী লীগের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। চতুর্থ যে বিষয়টি নিয়ে সুশীল সমাজ কথা বলছে তা হলো, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মুখ্য হয়ে এসেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে দেশের শীর্ষ দুইটি পত্রিকা প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার শুরু থেকেই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রচারণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং এই আইনটি নিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য নানা রকম প্রচারণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর সুশীলদের কাছে শেষ অস্ত্র হলো দুর্নীতি এবং সরকারের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আসছে। এই পাঁচটি ইস্যুতে সুশীল সমাজ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকেও একত্রিত করার চেষ্টা নীরবে করছে। ইতোমধ্যে বিএনপি এই পাঁচটি ইস্যু গ্রহণ করেছে এবং বিএনপির সাম্প্রতিক সময়ে যে কর্মসূচিগুলো দিচ্ছে সেই কর্মসূচিগুলোতে এই পাঁচটি ইস্যু ঘুরে ফিরে আসছে। জাতীয় পার্টিও এখন সুশীলদের এই পাঁচটি ইস্যুকে কেন্দ্র করেই ঘুরপাক খাচ্ছে এবং এই পাঁচ ইস্যুতেই তারা এখন সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছে।
আওয়ামী লীগের যে ১৪ দলীয় জোট সে ১৪ দলীয় জোটে জাসদ ছাড়া অন্য দলগুলো এখন সরকারের সমালোচকে পরিণত হয়েছে। আর মহাজোট নেই বলেই জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে যে আগামী নির্বাচনের আগে সুশীলদের নীলনকশা চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুশীল সমাজ চায় যে একটা অচলাবস্থা তৈরি করতে যেন কোনো রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে একতরফা নির্বাচন করতে হবে। আর একতরফা নির্বাচন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তখন তারা হস্তক্ষেপ করবে এবং এরকম একটি ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই তারা সরকারকে হটাবে। তবে এই পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন কতটুকু হবে সেটিই বড় প্রশ্ন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, নির্বাচনের এখনও দেড় বছর বাকি আছে। আর সুশীল সমাজ যুদ্ধ করছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রাজ্ঞ এবং পরিণত রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনার সাথে। কাজেই এই যুদ্ধে জয় সুশীল সমাজ যত সহজ মনে করছে শেষ পর্যন্ত তত সহজ নাও হতে পারে।