মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় যুবলীগ নেতা হাসান আবারো বেপরোয়া : থেমে নেই চাঁদাবাজি বিশ্ব কন্যা শিশু দিবসে নেলসন ম্যান্ডেলা পিস এ্যাওয়ার্ড পেলেন সাংবাদিক এম শিমুল খান বিআরটিসির চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলামের কারনে ঘরে বসেই বকেয়া বুঝে পাচ্ছেন বিআরটিসির অবসরপ্রাপ্তরা যে কোন ষড়যন্ত্র রুখে দিবে বিআরটিসির কর্মীরা বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বিআরটিসিতে এনেছেন আমূল পরিবর্তন বিআরটিসি কল্যানপুর বাস ডিপোর সাবেক ম্যানেজার নুর-ই-আলমের ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা ও দুদক বরাবর অভিযোগ বিআরটিসি বরিশাল বাস ডিপোর সাবেক ম্যানেজার জামশেদ আলীর ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা ও দুদক বরাবর অভিযোগ প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদের প্রতিবাদ মধ্যরাতে গোপনে বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করেন তারেক রহমান সওজ বিভাগের প্রকৌশলী তাপসী দাসের ফের খুলনায় আসার খবরে ক্ষিপ্ত নাগরিক সমাজ

গর্ভাবস্থায় স্ত্রীর পাশে থাকতে না পারার বেদনা প্রবাসীদের

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৪৬৫ Time View

সিঙ্গাপুর থেকে ওমর ফারুকী শিপন: বাড়ি থেকে ছোট ভাই কল দিয়ে বলল, ভাবির প্রসব ব্যথা উঠেছে এখন কি হাসপাতালে নিয়ে যাব? তার কথা শুনে আমি ঘাবড়ে গেলাম। আমাদের দেশে স্বামী আর তার পরিবারের অনুমতি ছাড়া মেয়েরা সহজে হাসপাতালে সিজারে বাচ্চা প্রসব করতে চায় না। এখনো অনেকেই মনে করে একজন পুরুষ ডাক্তার একজন নারীকে পেট কেটে বাচ্চা বের করবে তা ধর্মবিরোধী। এ কারণে নরমাল ডেলিভারির জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালায়। প্রাচীন ও অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি শিক্ষিত সমাজ বিশ্বাস করে না। তারা কোনোপ্রকার ঝুঁকি না নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

ছোট ভাইকে বললাম এতে আমার কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার কি আছে, যা তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যা। তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলাম।

আমার চোখের সামনে বাচ্চা প্রসবের সময় অসহায় এক নারীর মৃত্যু চিত্র ভেসে উঠল। তখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। স্কুল থেকে বাসায় ফেরার সময় দেখেছিলাম একজন নারীকে খাটে শুইয়ে চারজন লোক বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। খাটে শুয়ে থাকা নারীর চিৎকারে চারপাশ প্রকম্পিত। তার কান্না আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। এই চিৎকার শুনে মনে হয়েছিল এখনই বুঝি তার প্রাণটা উড়ে যাবে।

বলাবাহুল্য, আমি যখনকার কথা বলছি তখন আমাদের গ্রামে যানবাহন চলার মতো কোনো রাস্তা ছিল না। আমাদের গ্রাম থেকে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা হাঁটার পরই রিকশাভ্যান চলাচলের রাস্তা পাওয়া যেত।

বাসায় ফিরে কোনো কিছু ভালো লাগছিল না। অসহায় নারীর কী হলো ভাবতে ভাবতেই সারা বিকেল কেটে গেল। রাতে বিছানায় শোয়ার পর মা আর দাদির আলাপ শুনতে পেলাম। দাদি মাকে বলছে, শুনেছ বউমা অমুকের বউ আর বাচ্চা দুজনে মারা গেছে, হাসপাতাল নিতে পারেনি। সংবাদটি শোনার পর দু’চোখ গড়িয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল।

মা দাদিকে জিজ্ঞেস করলেন, আম্মা কী হয়েছিল? দাদি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছিলেন, বাচ্চা প্রসবের সময় শুধু মাথা বের হয়েছিল। যখন অনেক চেষ্টা করেও কিছু হচ্ছিল না তখন তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা মনে হয়েছে। মা আফসোস করে বললেন, আহা! কত কষ্ট সহ্য করেই না মরল মেয়েটা। আল্লাহ যেন কোনো শত্রুর মেয়েকেও এমন যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু না দেয়।

আমার বয়সের যারা আছে তাদের অনেকেরই ডেলিভারি হয়েছে ঘরে। বেশিরভাগ মায়েরই হয়েছে নরমাল ডেলিভারি। সিজার ডেলিভারির পরিমাণ তখন খুব কম ছিল। গ্রামের মানুষ জানতই না সিজার কী? আজকাল সিজারের পরিমাণ হঠাৎ করে অনেক বেড়ে গেছে। এখন নরমাল ডেলিভারির খবর খুব কমই শোনা যায়। এসব কথা চিন্তা করে আমি সিজারের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েই বসেছিলাম।

তাই আমি কোনো চিন্তা ভাবনা না করেই ছোট ভাইকে বললাম দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে। রাতে ছোট ভাই আবার কল দিয়ে বলল, ভাই ভাবিকে হাসপাতাল নিয়ে এসেছি। ডাক্তার চেকআপ করে বলেছেন, আজই সিজার করতে হবে নইলে বাচ্চা ও মা দু’জনের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। আমি বললাম, তাহলে দেরি কেন এখনই সিজার করার ব্যবস্থা কর। সে বলল, ভাই ভাবিকে অপারেশন রুমে নিয়ে যাচ্ছে একটু পর কথা বলব।

সে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল। এদিকে উৎকণ্ঠায় আমার কপাল বেয়ে শিশির বিন্দুর মতো ঘাম ঝরছে। এই প্রথম নিজেকে অসহায় লাগছে। এই সময়টা স্ত্রীর পাশে থাকাটা আমার জন্য জরুরি ছিল। একজন নারী গর্ভাবস্থায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। অজানা আশঙ্কায় সে নিন্দ্রাহীন রাত কাটায়।

তখন নিজেকে তিনি খুব অসহায় ভাবেন। এ সময় সে চায় তার স্বামী সবসময় তার পাশাপাশি থাকুক তাকে ভরসা দিক। স্বামী পাশে থাকলে সে বেঁচে থাকার প্রেরণা পায়। আমার মতো প্রবাসীরা স্ত্রীর গর্ভাবস্থায় পাশে থাকতে পারি না। তাদের স্ত্রীরা কতটা যে অসহায় বোধ করেন তা একমাত্র তারাই জানেন।

প্রবাসীরা চায় সন্তান প্রসবের সময় তার স্বামী পাশাপাশি থাকুক। তার হাত শক্ত করে ধরে ভালোবেসে কপালে চুমু খাক। সন্তানকে প্রথম তার স্বামীই দেখুক। স্বামীই প্রথম সন্তানের কান্না শুনুক। তাকে কোলে তুলে নিয়ে চুমু খাক কিন্তু প্রবাসীদের স্ত্রীদের মনোবাসনা অপূর্ণই থেকে যায়। এই ত্যাগের জন্যই আমি সব প্রবাসীর স্ত্রীদের স্যালুট জানাই। তারাও প্রবাসীদের মতো ত্যাগ স্বীকার করে বলেই আমরা প্রবাসে নিশ্চিন্তে একটু ঘুমাতে পারি।

আমি চোখ দুটি বন্ধ করে কাল্পনিকভাবে হাসপাতালে ছুটে যাই। আমার স্ত্রীর সন্তান হবে আমি বারান্দায় পাঁয়চারী করছি। ছেলেকে দেখার উত্তেজনায় শিহরিত। আমার ধ্যান ধারণা সব অনাগত সন্তানকে ঘিরে। এমন সময় মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠল।

কল রিসিভ করতেই ছোট ভাই আনন্দিত হয়ে বলল, আলহামদুলিল্লাহ ভাই আপনার ছেলে হয়েছে। আনন্দে আমি চোখের পানি আটকে রাখতে পারলাম না। আমার দু’চোখ গড়িয়ে আনন্দাশ্রু পড়ছে। ছোট ভাইকে বললাম, মোবাইলটা নিয়ে ভেতরে যা আমি ছেলের কান্না শুনব। সে বলল, এখন আমি ভেতরে যেতে পারব না। আপনি আন্টির নম্বরে কল দেন উনি ভেতরে আছেন।

আমি শাশুড়ির নম্বরে কল দিলাম তিনি কল রিসিভ করেই আনন্দিত হয়ে বলল, তোমার ছেলে হয়েছে ঠিক তোমার মতো। এই শোন ছেলের কান্না। আমি ছেলের কান্না শুনতে লাগলাম। কোন পিতা-মাতাই সন্তানের কান্না সহ্য করতে পারেন না। তবে সন্তানের প্রথম কান্না পৃথিবীর সব পিতা-মাতাকে স্বর্গীয় সুখ দেয়। সন্তানের কান্না শোনায় যে এত আনন্দ তা উপলব্ধি করতে পেরে আমিও আনন্দে কান্না করছি। আমার ছেলে কান্না করে পৃথিবীতে তার আগমনী বার্তা জানিয়ে দিল। আমার সন্তানই আমার সুখ আমার স্বর্গ।

একজন প্রবাসী পিতা হিসেবে এর চেয়ে বেশি কিছু পেতে পারি না। কথা ছিল আমার সন্তানকে আমিই প্রথম কোলে নিয়ে চুমু খাব কিন্তু তার কিছুই হলো না। তার কান্না শুনেই স্বর্গীয় সুখ নিয়ে ঘুমাতে গেলাম।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 agamirbangladesh24.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin