নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন বাড়ছে। তার ভূমিকা, তার কথাবার্তা ইত্যাদি নিয়ে রহস্য তৈরি হচ্ছে। তিনি আসলে কার পক্ষে খেলছেন, কার ট্রামকার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হবেন। নানা কারণেই গুঞ্জন আরো বেড়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে সুশীলদের যোগাযোগ বেড়েছে। এমনকি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার একাধিক আলাপচারিতার খবর বিভিন্ন গনমাধ্যমে চাউর হয়েছে। যদিও জিএম কাদেরের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার যে একটি যোগাযোগ রয়েছে সেটি জাতীয় পার্টির কোনো কোনো মহল স্বীকার করে নিয়েছে। জিএম কাদের কি তাহলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ট্রাম্পকার্ড হিসেবে মাঠে নেমেছেন? কারণ, তিনি যে ভাষায় যেভাবে সরকারকে আক্রমণ করছেন তাতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা বিএনপিকেও হার মানাচ্ছে। তিনি যে সমস্ত বিষয়গুলো উপস্থাপন করছেন সে সমস্ত বিষয় গুলো আসলে সুশীল সমাজের বক্তব্যের অনুরণন বা চর্বিত চর্বণ। নির্বাচিত চেয়ারম্যান তাহলে কি সুশীল সমাজ তাকে সামনে নিয়ে এসেছে? আবার কোনো কোনো মহল বলছেন জিএম কাদেরের সঙ্গে বিএনপির একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।
জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের নির্বাচনে একটি এক্স-ফ্যক্টর। বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, হয় জাতীয় পার্টি অথবা জামায়াত। এই দুটি রাজনৈতিক দল নিজে ক্ষমতায় আসতে পারে না কিন্তু অন্য দলগুলোকে ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই জামায়াতকে প্রকাশ্যে যখন বিএনপি ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে কিংবা অন্যভাবে বলা যায় জামায়াত যখন প্রকাশ্যে বিএনপির সঙ্গে আর সম্পর্ক নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে সেই সময় রাজনৈতিক মেরুকরণের হিসেবেই জাতীয় পার্টির গুরুত্ব বেড়েছে। তাহলে কি জাতীয় পার্টি এবার বিএনপিকে সমর্থন দিবে? এই প্রশ্নটি রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে। কারণ আদর্শিক দিক থেকে বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির একই ঘরণার রাজনৈতিক দল। দুটিই পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের সৃষ্টি। দুটোর একটিও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস করে না। দুটি রাজনৈতিক দলই পঁচাত্তরের খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে, মদদ দিয়েছে, পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। দুটিই অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখল করেছে। কাজেই সেই হিসেবে জাতীয় পার্টি বিএনপির আদর্শিক ঐক্য অনেক সহজেই হতে পারে বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। আর সেই চেষ্টাটি বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির কোনো কোনো মহল করছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিএনপির লক্ষ হলো আগামী নির্বাচন হতে না দেওয়া। সেই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো কৌশল হলো জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা। তাহলে আন্তর্জাতিক মহলে এটা সুস্পষ্টভাবে বুঝানো সক্ষম হবে যে, প্রধান দুটি বিরোধী দল বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি কেউই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। সেই কৌশলে জাতীয় পার্টি কি তাহলে এবার নির্বাচনে বিএনপির ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হবে? আর সেজন্যই জিএম কাদের এভাবে আক্রমণাত্মক কথা বলছেন? অনেক মহল বলছে, আসলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বা বিএনপি কারোরই ট্রাম্পকার্ড নয় জিএম কাদের। তিনি আসলে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ট্রাম্পকার্ড। সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে এবং এই নির্বাচন নিয়ে নানারকম রাজনৈতিক মেরুকরণ করছে তার মধ্যে জাতীয় পার্টি যদি একটি স্বতন্ত্র শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে তাহলে সেটি সরকারের জন্য লাভ। এমনিতেই এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টি ক্ষয়িষ্ণু। এখন জাতীয় পার্টির তীব্র সরকার বিরোধীদের মাধ্যমে একটু ইতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যে এসেছে। বিশেষ করে এরশাদের পর জাতীয় পার্টির পুনর্জাগরণের পিছনে জিএম কাদেরের সরকারবিরোধীতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আওয়ামী লীগের হিসেব হলো যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে না আসে তাহলে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে অন্যান্য সব বিরোধী দলকে নিয়ে একটি বড় ধরনের জোট হতে পারে। আর জাতীয় পার্টি যদি এখন থেকে সরকারকে তোষামোদ করা এবং সরকারের অনুগত বিরোধী দল হিসেবে কাজ করে তাহলে বিরোধী দল হিসেবে এটি গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না, জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে না। আর এ কারণেই জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগই সবুজসংকেত দিয়েছে তীব্র সরকার বিরোধিতা করার জন্য, যেন জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে একটি বড় ধরনের জোট হয়। জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে যদি জোট হয় তাহলে সেক্ষেত্রে বিএনপির একটি অংশ এখানে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে রাজনীতির খেলায় জাতীয় পার্টি এবার নির্বাচনে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠতে পারে। সেই বিবেচনা থেকেই হয়তো জাতীয় পার্টিকে মাঠে নামিয়েছে আওয়ামী লীগি। তবে শেষ পর্যন্ত জিএম কাদের কার ট্রাম্পকার্ড সেটা বোঝা যাবে নির্বাচনের আগে আগে। তবে জিএম কাদের যে নিজ ইচ্ছায় এটা করছেন না সেটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।