নিজস্ব প্রতিবেদক : হঠাৎ করেই বিরোধী দলের ওপর মারমুখী হয়ে উঠেছে পুলিশ। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, তাদেরকে উস্কানি দেয়া হয়েছ, তাদের ওপর আঘাত করা হয়েছে। এই অবস্থায় আত্মরক্ষার জন্যই তারা পাল্টা আঘাত করেছে। কিন্তু বিভিন্ন স্থানের ঘটনাগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ অসহিষ্ণু ছিল এবং প্রথম থেকেই পুলিশ মারমুখী অবস্থান গ্রহণ করেছিল। কেন পুলিশ মারমুখী হলো, এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম কথাবার্তা চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম কর্মসূচি গ্রহণ করছে। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং নিয়ে বিএনপি গত সপ্তাহে লাগাতার বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি পালন করে। এর মধ্যে পয়লা সেপ্টেম্বর ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ সমস্ত কর্মসূচিগুলোতে বিএনপির ভাষায় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলো আক্রমণ করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরাসরিভাবে এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে এবং তারা বলেছে যে, বিএনপি শুরু থেকেই মারমুখী আচরণ করেছে। বিএনপি একটা কিছু ঘটানোর জন্য, মিডিয়া কাভারেজ পাওয়ার জন্য সহিংস আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন যে, বিএনপি বিনা উস্কানিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এই চেষ্টার পিছনে সুগভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। এই ষড়যন্ত্রকে নাকচ করার জন্যই জনগণের জানমাল হেফাজত এবং আওয়ামী লীগের ওপর হামলা প্রতিরোধের জন্য আওয়ামী লীগকে মাঠে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে, পুলিশের এই আচরণ অসহিষ্ণু হয়ে উঠল কেন? যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বিরোধী দল যদি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে সেই কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না বরং সেই কর্মসূচিকে স্বাগত জানানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর কয়েকটি বক্তব্যের পরও এই ধরনের ঘটনার হিসেবে মিলাতে চাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মধ্যে কোনো কোনো স্থানে, কিছু কিছু মহল আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে পরিস্থিতি ঘোলা করতে চাইছেন। এটা সুগভীর কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা, রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির একটি নীলনকশার বাস্তবায়ন কিনা, তা খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ, কয়েকটি স্থানে এমন ঘটনা ঘটেছিল যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, পুলিশ গায়ে পড়েই ঝগড়া বাঁধিয়েছে। শুধু যে বিএনপির সমাবেশের ঘটনায় এরকম এমনটি নয়। এর আগে, ১৫ আগস্ট শোক দিবসের উপলক্ষে অনুষ্ঠানে বরগুনাতেও একই ঘটনা ঘটেছে এবং সেখানে ছাত্রলীগের বেধড়ক পেটানো হয়েছে। যদিও ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে পরবর্তীতে সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু এই ঘটনাগুলো পারস্পরিকভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং তাৎপর্য বলে মনে করা হচ্ছে।
কোনো কোনো মহল কি চাইছেন যে, রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করার জন্য এবং এজন্য উস্কানি সৃষ্টির জন্য। আবার এর বিপরীত মতামতও পাওয়া যাচ্ছে, বিএনপি মনে করছে যে শুধু বিক্ষোভ সমাবেশ করে কোনো লাভ হবেনা। রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়ানোর জন্য প্রয়োজন লাশ। বিএনপি এখন লাশের খোঁজে নেমেছে। যে কারণে ভোলাতে বিএনপি নেতারা সহিংস হয়ে ওঠে। নারায়ণগঞ্জেও একই ঘটনা ঘটেছে। যেকোনো ভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করে পরিস্থিতি ঘোলা করা এবং ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার একটি নীরব প্রবণতা বিএনপির কৌশলের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। যে কারণেই আগের বিএনপির সমাবেশ এবং বিক্ষোভ গুলো সাথে এখনকার বিএনপির সমাবেশ বিক্ষোভ গুলোর মৌলিক কিছু পার্থক্য দেখা গেছে। যেমন- নারায়ণগঞ্জের ঘটনার উদাহরণ দিয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, সেখানে বিএনপির এসেই পুলিশের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে এবং পুলিশকে কোণঠাসা করে রাখার জন্য সহিংস হয়ে ওঠে। তখন পুলিশ বাধ্য হয়েই আত্মরক্ষা করে। যে কথাটি প্রধানমন্ত্রী তার জাতীয় সংসদের সমাপনী অধিবেশনের ভাষণেও বলেছেন। কিন্তু এই বিষয়গুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ এর দাবি রাখে কোথায় পুলিশ যেচে গায়ে পড়ে আক্রমণ করেছে আর কোথায় বিএনপি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে তার নির্মোহ বিশ্লেষণ করা দরকার। কারণ পুলিশের এই মারমুখী আচরণ সারাদেশে বিএনপিকে কিছুটা হলেও উজ্জীবিত করেছে। তাহলে বিএনপিকে উজ্জীবিত করা এবং বিএনপির আন্দোলনকে বেগবান করার মিশনেই কি কেউ ষড়যন্ত্র করছে? এবং সেজন্যই কি এরকম আক্রমণাত্মক ভূমিকায় পুলিশ অবতীর্ণ করছে? এই প্রশ্নটিই এখন বিভিন্ন অঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে।