নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী যখন বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়েছেন ঠিক সেই সময় সারাদেশে বিএনপির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল নারায়ণগঞ্জের সহিংসতায় দুইজন মারা গেছেন। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে উত্তেজনা বিরাজ করছে। অন্যান্য এলাকাতেও ছোটখাটো সংঘর্ষ হয়েছে। এর ফলে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে। সামনের দিনগুলোতে বিএনপি আরও সহিংস রূপে আবির্ভূত হবে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন এবং এখানে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের একটি ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। এটি রাজনীতির জন্য এক অশনি সংকেত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এর ফলে তৃতীয় শক্তি লাভবান হবে এবং রাজনীতিতে অন্য কোনো কিছু ঘটানোর একটা পটভূমি তৈরি হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘাত সহিংসতা সৃষ্টি করেই রাজনীতিতে তৃতীয়পক্ষ ক্ষমতা আরোহণ করেছে। ‘ওয়ান-ইলেভেন’ হলো তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। আর এখনো আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকে মাঠে নামিয়ে একটি সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলে কোনো কোনো মহল মনে করছেন। এর পেছনে যেমন দেশীয় মদদ রয়েছে, তেমনি আছে আন্তর্জাতিক কোনো কোনো মহলেরও ইন্ধন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বিএনপি এখন হঠাৎ করেই কেন মারমুখী হয়ে উঠলো এটির বিশ্লেষণ করা দরকার। তারা বলছেন যে, বিএনপির এই মারমুখী হয়ে ওঠার প্রধান কারণ রয়েছে আন্তর্জাতিক মদদ এবং প্রচ্ছন্ন সমর্থন। তারাই বিএনপিকে রাজপথে নামার প্ররোচনা দিচ্ছে বলে মনে করছেন। তাছাড়া কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন যে, বিএনপি এখন ধারণা করছেন যে, সরকার চাপের মধ্যে আছে এখনই যদি রাজপথে নামা যায় তাহলে সরকারকে চাপে ফেলা যাবে। আবার অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু কিছু অতি উৎসাহী পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করছে এবং ঘোলাটে করছে। বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও আচরণ সহনশীল নয় বলেই দৃশ্যমান হচ্ছে। তারা কি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করার জন্য এটি করছে নাকি পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্য এটি করছে সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে সামনে এসেছে। কারণ, অতি উৎসাহীরা অনেক সময় জলঘোলা করার জন্য এ ধরনের কাণ্ড ঘটাতে পারেন বলে কেউ কেউ মনে করছেন। আর তাই কোনো কোনো জায়গায় পুলিশের বাড়াবাড়ি আসলে আত্মঘাতী তৎপরতা কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখার দরকার হলে কারও কারও ধারণা।
অন্যদিকে, কোনো কোনো জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকেও মারমুখী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা বিরোধী দলকে দাঁড়াতেই দেবে না এমন একটি মনোভাব দেখাচ্ছে। এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন। একটি প্রধান কারণ হলো যে, আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন লাভের কারণে কোনো কোনো মহল এ ধরনের স্থানীয় পর্যায়ে তাদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য বিরোধী দলকে দেখে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে তারা এলাকায় এক ধরনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সে কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে কারও কারও ধারণা। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন যে, বিরোধী দল যদি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে এবং রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যদি আওয়ামী লীগ আক্রান্ত না হয় তাহলে সেই কর্মসূচির ব্যাপারে তাদের কোনো ভূমিকা থাকা উচিত নয়। কিন্তু তৃণমূলের আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা যায় তারা বলছেন যে, মাঠ দখল করতে দেওয়া হবে না, রাজপথ দখল করতে দেওয়া হবে না। কাজেই যেখানেই বিএনপি সভা-সমাবেশ করবে সেখান তাদেরকে বাধা দেওয়া হবে। ফলে রাজনীতিতে আগামী দিনগুলোতে যে সহিংসতা এবং উত্তেজনা আরও বাড়বে এ নিয়ে কোন সন্দেহ নাই এবং এরকম সহিংসতা উত্তেজনার মধ্যে অন্য কোনো পক্ষ সুযোগ নিবে কিনা সেটি এখন সবচেয়ে বড় দেখার বিষয়।