নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী ৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার আনুষ্ঠানিক বৈঠক হওয়ার কথা আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নানা কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য এটি যতটা না গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভারতের জন্য। ভারত এই সফরটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং এই সফরকে কেন্দ্র করে ভারতের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নানামুখী তৎপরতা চোখে পড়ছে। ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নিকটতম প্রতিবেশী। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান অনস্বীকার্য। তবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক পারস্পরিক নির্ভরশীল। এখানে শুধুমাত্র ভারত যে বাংলাদেশকে দিবে এমনটি নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশেরই ভারতকে দেয়ার অনেক বেশি কিছু আছে বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। ভারতীয় কূটনীতিকরাও এটা অস্বীকার করে না। এই সফরেও ভারতের চাওয়ার দিকগুলোকে আবার নতুন করে আলোচনা হবে। দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে গেলেই ভারতের প্রত্যাশা গুলো পূরণ হবে, এমনটি মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ভারত বাংলাদেশের কাছে কি চায়? মোটাদাগে যে বিষয়গুলো ভারত বাংলাদেশের কাছে চায় তার মধ্যে প্রথম রয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতিরোধ করা। বাংলাদেশ ২০০৮ সালের আগে পর্যন্ত ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আনাগোনা ছিল, বিচরণ ছিল। বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চল গুলোতে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জায়গাও করে নিয়েছিল, তারা সেখানে প্রশিক্ষণও নিত। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব নেয়ার পর ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশের মাটিতে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জায়গা দেওয়া হবে না। এই বিষয়ে তিনি শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী যা বলেন সেটি তিনি করেন। আর এ কারণেই বাংলাদেশের মাটি থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সব শেকড় নির্মূল করে দেওয়া হয়েছিল ২০০৯ সাল থেকে। ভারতের কাছে এটি ছিল বিরাট প্রাপ্তি। ভারতের থিংক-ট্যাংকরা এ নিয়ে কোনো রাখঢাক করেনি। প্রকাশ্যে বলেছে যে, তারা এ জন্য কৃতজ্ঞ। তাদের হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এখন ভারতে আর কোনো সুবিধা করতে পারছে না। কাজেই এই বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সহযোগিতা যেন অব্যাহত থাকে এটি হলো ভারতের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা।
ভারতের দ্বিতীয় প্রত্যাশারও অনেকখানি পূরণ হয়েছে। ভারত বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধা চায়। বিশেষ করে সেভেন সিস্টারে পণ্য পরিবহনসহ তার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের করিডর ব্যবহার করাটা ছিল ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সুযোগও করে দিয়েছেন এবং দুই দেশের মধ্যে কানেক্টিভিটি আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি হয়েছে। এই ধারাকে ভারত এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। ভারত মনে করে, বাংলাদেশে যদি করিডোর হিসেবে ব্যবহার করা যায় তাহলে ভারতের অর্থনৈতিক সাশ্রয়ই কেবল হবেনা, উন্নয়নের ক্ষেত্রেও সেটি বড় ধরনের অবদান রাখবে। আর এ কারণেই ভারত কানেক্টিভিটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। এবারের সফরে সে বিষয়টিও আলোচনা হবে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নিয়েও ভারতের কিছুটা উদ্বেগ এবং অস্বস্তি আছে। ভারত চায় যে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক থাকুক কিন্তু চীনের অর্থনীতির ফাঁদে যেন বাংলাদেশ না পড়ে, চীন যেন বাংলাদেশকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে যেটি শ্রীলঙ্কা বা অন্যান্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে ঘটেছে। চীনের আগ্রাসন সেই সমস্ত দেশগুলোতে বেশি দেখা যায় যে সমস্ত দেশ গুলোতে অভিন্ন ভাষাভাষী এবং এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ চীন আগ্রাসনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে ভারতের থিংক-ট্যাংকরা মনে করে। এক্ষেত্রে ভারতের চাওয়া হলো, বাংলাদেশ যেন চীনের সাথে অতিরিক্ত সম্পর্কের ফাঁদে না পড়ে।
এই বিষয়গুলোই মূলত ভারতের চাওয়া। আর সেই চাওয়াগুলো পূরণের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি গত এক যুগে হয়েছে সেই অগ্রগতির ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই হলো প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে ভারতের প্রধান লক্ষ্য।