নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই। আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতের আমীর এই তথ্য প্রকাশ করেছেন। এ তথ্য প্রকাশের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছুটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিলো। এ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গণমাধ্যমকর্মীরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন, উত্তর না দেওয়ারও অধিকার তার রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক নিয়ে এই টানাপোড়েনের ভিতরেই দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে বিএনপি এবং জামায়াত ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে। নারায়ণগঞ্জ, নেত্রকোনা, নরসিংদীসহ দেশের অন্তত পাঁচটি স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে যে বিক্ষোভ হয়েছে সেখানে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতের কর্মীদের সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। অর্থাৎ প্রকাশ্যে জামায়াত বিএনপির বিরোধিতা করলেও গোপনে গোপনে এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে আছে জামায়াত। নারায়ণগঞ্জের ঘটনার কথা যদি ধরা যায়, নারায়ণগঞ্জে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সেই সহিংসতার ঘটনায় বিএনপির মিছিলে ছিল জামায়াতের শতাধিক কর্মী এবং জামায়াতের নেতারাই প্রথম পুলিশের ওপর আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলো। একই ঘটনা ঘটেছিলো ভোলায় এবং নরসিংদীতে। যার ফলে অনেকে মনে করছে যে, আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে আসলে বিএনপি সাথে মাঠে মিলেমিশে একাকার হওয়ার একটা কৌশল জামায়াত নিয়েছে। শুধু তাই নয়, নারায়ণগঞ্জের সহিংসতায় নিহত শাওনের গায়েবানা জানাজা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। সবগুলো গায়েবানা জানাজাতেই জামায়াতের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
কিছুদিন ধরেই বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক নিয়ে বিএনপির উপর চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে যখন বিএনপি জামায়াতের জন্য ২০টি আসন ছেড়ে দিয়েছিলো তখনই এর তীব্র সমালোচনা হয়েছিলো। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে বলা হয়েছিলো যে, বিএনপি যদি জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ না করে তাহলে এই দলটি আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে আস্তে আস্তে প্রকাশ্যে জামায়াতের কাছ থেকে সরে আসতে শুরু করে বিএনপি। এই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিএনপিকে অনুরোধ করে তারা যেন জামায়াতের সাথে সম্পর্ক ছেদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। কিন্তু বিএনপি কখনোই সেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। বরং জামায়াতের সাথে সম্পর্ক নিয়ে এক ধরনের লুকোচুরি খেলা খেলেছে। তবে বিএনপি এবং জামায়াতের ২০ দলীয় জোটকে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে অনেকটা অকার্যকর করে রাখা হয়েছিলো। এর মধ্যেই জামায়াত সারাদেশে সংগঠন পুনর্গঠন করার কাজ করে এবং প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত সংগঠনকে শক্তিশালী করার মিশনে অনেকখানি সফল হয়। তাই গত দুই সপ্তাহ আগে জামায়াতের নেতা ঘোষণা করেন যে, ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে নেই এবং তারাও বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শরিক নন। কিন্তু জামায়াত নেতার এই কথা প্রতিফলন মাঠে দেখা যাচ্ছেনা। সারাদেশে বিএনপি যে আন্দোলন করছে সেই আন্দোলনে জামায়াতই তাদের একমাত্র অংশীদার এবং জামায়াতের সমর্থন, সহযোগিতা নিয়েই আন্দোলনগুলো মারমুখী হয়ে উঠছে।
ইতিমধ্যে যুবলীগের নেতা শেখ ফজলে শামস পরশ এ প্রসঙ্গকে উত্থাপন করে তিনি বলেছেন যে, বিএনপি-জামায়াতকে প্রতিহত করতে হবে। বিএনপির এমন একটি স্থানীয় কোন রকম কর্মসূচি করেনি যেখানে জামায়াতের উপস্থিতি ছিল না। তাহলে প্রকাশ্য বিরোধিতা করে গোপনে বিএনপির সঙ্গে আঁতাত করার উদ্দেশ্য কি? এর পিছনে প্রধান কারণ হলো জামায়াত একটা সহিংস অবস্থা দেশে তৈরি করতে চাচ্ছে, রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি করতে চাচ্ছে এবং সেখানে তারা বিএনপিকে সামনে ব্যবহার করছে। বিএনপির সমাবেশ গুলোতে তারা উপস্থিত হয়ে সেই সমাবেশ গুলোকে সহিংসতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করলে বিএনপির ওপর সরকারের নজর যাবে এবং জামায়াত তার সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে পারবে, এরকম একটি ভাবনা থেকেই হয়তো তারা করছে। তবে কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, বিএনপি-জামায়াত আসলে কখনোই ভাগ হয়ে যায়নি। বিএনপি-জামায়াত হলো একটি দেহের দুটি চোখ। কাজেই তারা আলাদা হবে এটি অবান্তর একটি ভাবনা। প্রকাশ্যে তারা আন্তর্জাতিক মহলের সহানুভূতি আদায়ের জন্য এবং সুশীলদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবার জন্য নিজেদের সম্পর্ক ছিন্নের কথা বলছেন। কিন্তু গোপনে তারা একে অন্যের পরিপূরক।