নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০০৩ সালের অক্টোবর মাস। তারেক জিয়া তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন মামুনকে নিয়ে দুবাইয়ে পৌঁছলেন। দুবাইয়ের বিলাসবহুল অভিজাত হোটেলে তারেক জিয়া প্রায়ই যান দুটি উদ্দেশ্যে। প্রথমত, সেখানে গিয়ে আমোদ-ফুর্তি করা। মাঝে মাঝে বাংলাদেশ বা অন্য দেশ থেকে তারকা সুন্দরী ললনাদেরকে তিনি নিয়ে যেতেন দুবাইতে। আবার মাঝে মাঝে বাংলাদেশের ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদেরকেও দুবাইতে ডাকা হতো বৈঠকের জন্য। ওই বৈঠকে তারেক এবং গিয়াসউদ্দিন মামুনরা বেশুমার ফুর্তি করতেন, অনেক বড় বড় তারকারাও তারেক-মামুনের ফুর্তির উপকরণ হিসেবে সে সময় কাজ করেছে। বাংলাদেশের তারকারা যেমন ছিল, তেমনি ছিল ভারতীয় তারকারাও। পাশাপাশি তারেক জিয়া ওই সময় বিভিন্ন বড় বড় ব্যবসায়ীদেরকে দুবাইতে ডাকতেন এবং তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিতেন ব্যবসা-বাণিজ্যের কমিশনের নামে। কিন্তু ২০০৩ সালের অক্টোবরের সফরটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। আইএসআই’র প্রধান তারেক জিয়াকে একটি বার্তা পাঠান যে, তার সঙ্গে বৈঠক করতে হবে। প্রথমে বৈঠকের স্থান ঠিক করা হয়েছিলো সৌদি আরব। কিন্তু সৌদি আরব নানা কারণেই নিরাপদ নয় বিবেচনা করে বিশেষ করে সৌদি আরবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি অত্যন্ত বেশি। এই বিবেচনা থেকেই দুবাইতে আইএসআই’র সঙ্গে তারেক জিয়ার বৈঠকটি চূড়ান্ত করা হয়।
আইএসআই জানতো যে তারেক এখানে ফুর্তি করতে আসেন এবং যে কারণে এই বৈঠকটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নজর এড়াবে। আর এই অক্টোবরের বৈঠকেই তারেক জিয়া চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন আইএসআই’র এর প্রধানকে। সেই সময় আইএসআই’র তৎকালীন প্রধান ছাড়াও আরো দুইজন কর্মকর্তা ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন আইএসআই’র ফরেন অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর মেজর জেনারেল জুবায়ের। মূলত মেজর জেনারেল জুবায়েরই পরবর্তীতে এইসব তথ্য লিখিতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইকে জানিয়েছিলো। দুবাইয়ের পাঁচ তারকা হোটেলের ওই বৈঠকে আইএসআই তারেকের সহযোগিতা চান ভারতে যেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহযোগিতা জোরদার করা হয়। বিশেষ করে সেভেন সিস্টারকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য। সেই সময় আইএসআই’র পোর্ট মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত হচ্ছিলো। তারেক পাকিস্তানকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন এবং এটিও বলেছিলেন যে পাকিস্তান যা চাইবে তাই করা হবে কিন্তু এটি করা এখন সম্ভব নয়। আইএসআই প্রধান জানতে চান, কেন সম্ভব নয়? জবাবে তারেক বলেন, শেখ হাসিনার জন্যই। শেখ হাসিনাকে তার রাজনীতির ভবিষ্যতে প্রধান কাটা হিসেবেও আইএসআই’র প্রধানকে উল্লেখ করেছিলেন তারেক। আর সেই সময় তিনি বলেছিলেন যে, শেখ হাসিনাকে যদি ‘শেষ করে দেওয়া যায়’ তাহলে পাকিস্তান যা চাইবে তারেক তা করতে পারবে এবং বাংলাদেশে জিয়া পরিবারকে কেউ ক্ষমতা থেকে হটাতে পারবেনা।
এই বৈঠকের পরপরই আইএসআই তারেক জিয়াকে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মাস্টারপ্ল্যান দেয়, আফগান জঙ্গিদেরকে দেয় এবং পাকিস্তানের কর্তৃত্বে থাকা ১৯৭৫ সালের খুনিদের সহযোগিতা দেয়। যে অস্ত্রগুলো দেওয়া হয়েছিলো তার অধিকাংশ পাকিস্তান সরবরাহকৃত বলে জানা গেছে। পরবর্তীতে তারেকের সঙ্গে আইএসআই’র একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এসব বৈঠকের মাধ্যমে গ্রেনেড হামলার রূপকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে। তারেক জিয়া নেতৃত্বেই ডিজিএফআই, এনএসআই এবং আরো কিছু ব্যক্তিবর্গের প্রত্যক্ষ পরিকল্পনায় ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করা হয়েছিলো। তবে দুর্ভাগ্য তারেকের, ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় অপারেশন নিখুঁতভাবে হলেও সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতালা শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে দেন। ফলে ওই বীভৎস ঘটনার পর তারেক জিয়া এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ওই অপারেশনকে ব্যর্থ হিসেবেই চিহ্নিত করে। আইএসআই’র গোপন রিপোর্টে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা আনসাকসেসফুল ডেভেস্টেটিং একটি অপারেশন হিসেবেই পরিচিত।