বিশেষ প্রতিনিধি: নির্বাচন সামনে রেখে সাজানো হচ্ছে প্রশাসন, খালি হচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ, প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য, জনপ্রশাসনসহ ১৩ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের পদ।
আসছে ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়মিত চাকরি শেষ করে অবসরে যাবেন দুই সিনিয়র সচিবসহ ১০ জন সচিব। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবসহ আরও তিন সচিবের। ফলে প্রশাসনের শীর্ষ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন সচিবসহ ১৩ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের পদ খালি হচ্ছে। এ সব পদে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ ও পদায়ন পেতে এরই মধ্যে দেন-দরবার শুরু হয়ে গেছে বলে খবর চাউর আছে। এদের মধ্যে কম বেশি দুই থেকে তিন জন চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন বলে আভাস মিলেছে।
জানা গেছে, এবার প্রশাসনের শীর্ষ পদ গুলোয় নিয়োগ ও পদায়ন হবে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে। সাজানো হবে নির্বাচনী প্রশাসন। আগামী বছরের শেষে বা ২০২৪ সালের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। যে-কোনো নির্বাচনেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগকারী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে আলোচনায় আছে নবম, দশম ও একাদশ বিসিএসের পাঁচ কর্মকর্তার নাম। তবে নবম ব্যাচের এক কর্মকর্তার ভাগ্য খুলতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তথ্য মতে, এ মুহূর্তে প্রশাসনে সিনিয়র সচিব/সচিব পদ মর্যাদায় চুক্তিসহ কর্মরত ৮৫ জন কর্মকর্তা। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে এ সংখ্যা ৭৬। তাঁদের মধ্যে বিসিএস ১৯৮২ নিয়মিত ও স্পেশাল ব্যাচের একজন করে, ১৯৮৪ ব্যাচের পাঁচজন, ১৯৮৫ ব্যাচের দুজন, ১৯৮৬ ব্যাচের ১২ জন, নবম ব্যাচের ১০ জন, দশম ব্যাচের ২৫ জন এবং একাদশ ব্যাচের ২০ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিবসহ ১৩ জনই চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগে কর্মরত। চলতি বছরের ১০ জন সচিবের পাশাপাশি আগামী বছর (২০২৩) অবসরে যাবেন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আরও ২৬ সচিব।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের চুক্তি ভিত্তিক চাকরির মেয়াদ শেষ হবে আসছে ডিসেম্বরে। চুক্তিতে থাকা সচিবদের মধ্যে ২২ সেপ্টেম্বর মেয়াদ শেষ হচ্ছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব শহীদ উল্লা খন্দকারের। নিয়মিত সচিবদের মধ্যে সেপ্টেম্বরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত ফজলুল বারী, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ সচিব ড. ইয়ামিন চৌধুরী ও অক্টোবরে অবসরে যাবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেন।নভেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম এবং ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান অমিতাভ সরকার অবসরে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন আল রশিদ,বিপিএটিসির রেক্টর রামেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব এম খলিলুর রহমান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এম সাইদুল ইসলাম এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব এম মোকাম্মেল হোসেন। ২৭ সেপ্টেম্বর বিসিএস ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব হওয়ার দুই বছর পূর্ণ হবে। ফলে চলতি বছরের শেষ দিকেই সচিব পদে নিয়োগ পেতে চেষ্টা করবেন ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তারা। আগে প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিব পদে এক বছর কাজ করার পর ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। এখন তা পরিবর্তন করে অতিরিক্ত সচিব পদে দুই বছর অতিক্রম করার পর সরাসরি সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
আলোচনায় যাদের নাম : মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পদে কে আসছেন তা নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে সাধারণত সিনিয়র এবং চাকরি জীবনে পরিচ্ছন্ন ইমেজ সম্পন্ন কর্মকর্তাদের বিবেচনায় নেওয়া হয়। বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ১৫ ডিসেম্বর। বিসিএস ১৯৮২ বিশেষ ব্যাচের এই কর্মকর্তা আবারও এ পদে চুক্তিতে নিয়োগ পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারের নামও আলোচনায় আছে।
১৯৮৫ ব্যাচের এই কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ আছে আগামী বছরের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। অর্থাৎ এ পদে নিয়োগ পেলেও এক মাসের মধ্যে তিনি অবসরে যাবেন। ফলে তাঁর সম্ভবনা কম মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব পদে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেনের নামও শোনা যাচ্ছে। বিসিএস ১৯৮৬ ব্যাচের এই কর্মকর্তা এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব ছিলেন। তিনি অবসরে যাবেন আগামী বছরের ১৩ অক্টোবর। বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শফিউল আলমের মেয়াদ শেষ হচ্ছে অক্টোবরে। ওই পদে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা ড. আহমদ কায়কাউস। পরবর্তী তিন বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে নভেম্বরে ওয়াশিংটনের উদ্দেশে পাড়ি জমাতে পারেন তিনি। সে ক্ষেত্রে মুখ্য সচিব পদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ৪ জুলাই। তিনি মুখ্য সচিব হলে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস-১) মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হতে পারেন। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজমের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২ নভেম্বর। সাধারণত এ পদে সচিবদের মেয়াদ বাড়ানো হয় না। পাশাপাশি মাঠপ্রশাসনের অভিজ্ঞতা ও চাকরির মেয়াদ কমপক্ষে দুই বছর আছে এমন কর্মকর্তাকে অতীতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ পদের জন্য বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় সরকার সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বিসিএস নবম ব্যাচের কর্মকর্তা। এর আগে তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও রাজশাহীর ডিসি ছিলেন। তাঁর চাকরির মেয়াদ রয়েছে ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ ছাড়া এ পদে নাম শোনা যাচ্ছে একাদশ ব্যাচের কর্মকর্তা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব কামরুল হাসান এবং বাস্তবায়ন,পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের। কামরুল হাসান ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের যুগ্মসচিব ও মৌলভীবাজারের ডিসির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর চাকরির মেয়াদ রয়েছে ২০২৫ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। একাদশ ব্যাচের মেধা তালিকায় প্রথম হওয়া আবু হেনা মোরশেদ জামান সরকারের স্পর্শকাতর দফতরের দায়িত্ব ছাড়াও ফরিদপুর ও নরসিংদীর ডিসির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর চাকরির মেয়াদ রয়েছে ২০২৬ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত। ধর্ম সচিব কাজী এনামুল হাসানের নামও শোনা যাচ্ছে এ পদে। তাঁর চাকরির মেয়াদ রয়েছে ২০২৫ সালের ২৪