বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকাঃ
• সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতার প্রভাব দেখিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার • বিআরটিসি’র বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত
• মাসিক ঘুষ বানিজ্য ৩০-৩৫ লাখ টাকা • ডিপো ইনচার্জ থেকে মাসোহারা (ঘুষ) বানিজ্য • ডিপোর মাসিক বরাদ্দের ছাড়পত্র প্রদানে ঘুষ বানিজ্য • নিয়োগ বানিজ্য • বদলী বানিজ্য।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) মহাব্যাবস্থাপক (হিসাব) মো: আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং বিআরটিসির বিরুদ্ধে অপপ্রচার করার অভিযোগ এনেছেন কামরুজ্জামান নামের এক কর্মকর্তা। দুদকে করা আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন পরিবহন জগতের বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য একমাত্র সেবা মূলক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিআরটিসি। নিরাপদ ও আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলাই বিআরটিসির রূপকল্প। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিআরটিসি’র অভিলক্ষ্য যাত্রী পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি করা ও পরিবহন খাতে দক্ষ জনবল সৃষ্টি করা।
সেই স্বপ্ন নিয়েই বিআরটিসি প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৬০ বছর পর ২০২১ সাল থেকে বর্তমানে বিআরটিসি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়ে ‘আয় বৃদ্ধি, ব্যয় সংকোচন ও যাত্রী সেবার মান উন্নয়ন’ শ্লোগানকে সামনে রেখে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে ঠিক এই সময়ে মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) মো: আমজাদ হোসেন নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য ম্যানেজার (অপারেশন) নূর ই আলম, আফতাব, ইলিয়াস শেখ, উজ্জল, রাসেদসহ কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিআরটিসির বাহিরের আবুল হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান নামের এক দালালের সমন্বয়ে একটা সিন্ডিকেট গঠন করে।
মো: আমজাদ হোসেনের নেতৃত্বে বিআরটিসির বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে বাধাগ্রস্হ করে বিআরটিসিকে ধ্বংস করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। শুধু তাই নয় বিআরটিসি’কে ধ্বংস করতে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় তথ্য সরবরাহ করে অর্থের বিনিময়ে কিছু সংখ্যক ভূঁইফোড় সাংবাদিক দিয়ে বিএনপি ঘরানার পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
দুদকে করা আবেদনপত্রে অভিযোগকারী আরো বলেন, মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) মো: আমজাদ হোসেন কে প্রতিমাসে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের মাসোহারা (ঘুষ) দিতে হয়। মাসোহারা না দিলে তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষদের নিকট ডিপো ইনচার্জদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা দেন। শুধু তাই নয় প্রতিমাসে ডিপো চালাতে বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থের ছাড়পত্র পেতে আমজাদ হোসেনকে ডিপোর হিসাব ইনচার্জ/ক্যাশিয়ারদের নির্দিষ্ট অংকের মাসোহারা দিতে হয়। মাসেহারা না দিলে তিনি বরাদ্দকৃত অর্থ কর্তন করে বিলম্বে ছাড়পত্র প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এরিয়া বিল (সম্পূরক) পাশ করতে হলেও আমজাদ হোসেনকে ঘুষ দিতে হয়। এমন কি করোনাকালিন সময়েও ডিপো ইনচার্জ, হিসাব ইনচার্জ, ক্যাশিয়ারদের কাছ থেকে মাসোহারা নিতে ভুলে যাননি। তখন মাসোহারা নিতেন তিনি বিকাশের মাধ্যমে।
ওই অভিযোগপত্রে আরো বলা হয় যে, বিআরটিসির নিয়োগ ও প্রশ্নপত্র তৈরী কমিটির সদস্য থাকার কারনে তিনি নিয়োগ বানিজ্যেও ছিলেন খুবই পারদর্শী। নিজের গাড়ীর চালক তাজুলের মাধ্যমে নিয়োগ প্রার্থীদের নিকট থেকে ঘুষের টাকা লেনদেন করাতেন। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে নিজ প্রাথীদের লিখিত পরিক্ষায় পাশ করিয়ে মৌখিক পরিক্ষায় উর্ধতন কর্তৃপক্ষদের দৃষ্টি এড়িয়ে নিয়োগ দিতেন। আবার নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে ঘুষ গ্রহন করে, নিয়োগ দিতে না পারলে ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কাউন্টারম্যান পদে রায়হান নামের একজনকে চাকরি দেওয়ার পরে নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়টি উধ্বর্তন কর্তপক্ষের নজরে এলে আমজাদ হোসেনকে নিয়োগ ও প্রশ্নপত্র তৈরি কমিটির থেকে অপসারণ করা হয়। এরপরও তিনি নিয়োগ বানিজ্যে থাকেনি।
অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, বদলী বানিজ্যেও পটু তিনি। হিসাব বিভাগের অধীনে কর্মরত বিভিন্ন ডিপোর হিসাব ইনচার্জ/ক্যাশিয়ারদের ঘুষের বিনিময়ে পছন্দনুযায়ী ডিপোতে বদলী করতেন মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে।
বাংলাদেশ আনসার বাহিনী থেকে প্রায় সাড়ে চার বছর যাবৎ বিআরটিসিতে আসা আমজাদ হোসেন বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে বর্তমানে কোটিপতি বনে গেছেন। নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন ফ্ল্যাট- বাড়ী ও সম্পদের পাহাড়। তিনি প্রতিমাসে বিআরটিসি থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা ঘুষ বানিজ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তিনি রাজধানীর রাজারবাগ এলাকায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেন এবং তিনি বর্তমানে সেখানেই বসবাস করছেন।
আমজাদ হোসেনের বিভিন্ন অপকর্ম, দুনীর্তি ও ঘুষ বানিজ্য নিয়ে বেশ কয়েকবার অভিযোগপত্র বিআরটিসির উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষদের নিকট জমা পড়লেও অদৃশ্য কারণে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী মাসোহারা (ঘুষ) দিতে না চাইলে বা কোন প্রকার প্রতিবাদ করলে মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) মো: আমজাদ হোসেন বিএনপি ঘরোনার হলেও নিজ বাডী নোয়াখালী জেলা হওয়ার সুবাদে সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠতার প্রভাব খাটিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরীচ্যুত করার ভয় দেখান।যার কারনে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বা কোন প্রকার অভিযোগ করতে সাহস পায় না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বর্তমান বিআরটিসি’র সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে এবং বিআরটিসি’কে ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষার করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ষড়যন্ত্রকারী দুর্নীতিবাজ ঘুষখোর মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) মো: আমজাদ হোসেনকে বিআরটিসি থেকে অপসারন করার জন্য সংশ্লিষ্ট উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ।