নিজস্ব প্রতিবেদক,বাগেরহাটঃ সুন্দরবনের অনেক বন্যপ্রাণীই এখন আর চোখে পড়েনা, অনেক প্রাণী ইতিমধ্যেই বিলুপ্তি হয়ে গেছে, আরো প্রায় বিলুপ্তির পথেও রয়েছে অনেক প্রাণী। তবে এ বিলুপ্তির পথে নেই বনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার। প্রতি বছরই বাঘের সংখ্যা বাড়ছে বলে বনবিভাগের জরিপে উঠে আসছে।
এদিকে সুন্দরবনে আবারো নতুন করে বাঘের সংখ্যা জানতে শুরু হয়েছে গননার কাজ। এ বাঘ গননা কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। রবিবার দুপুরে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের হাড়বাড়ীয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রে বাঘ গননার উদ্ধোধন করা হয়।
এ সময় উপমন্ত্রী বলেন, বাঘ বাচলে সুন্দরবন বাচবে, আর সুন্দরবন বাচলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশ বাচবে। তাই সকলকে মিলেই বাঘ ও সুন্দরবন সুরক্ষা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এবার তৃতীয়বারের মতো বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বাঘ গননার কাজ শুরু করা হয়েছে। ৫ নভেম্বর সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগে বাঘ গননা শুরু হয়, যা শেষ হবে আগামী বছরের এপ্রিলে। আর চলতি বছরের জানুয়ারীতে শুরু হয়ে সম্পন্ন হয়েছে সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বাঘ গননা। এ গননার ফলাফল আগামী বছরের ২৯জুলাই বাঘ দিবসে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাঘ গননার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের সাথে ছিলেন খুলনাঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো, বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ড. আবু নাসের মহসিন হোসেন, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা বিভাগের (খুলনা) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোঃ নুরুল করিম, চাঁদপাই রেঞ্জের (মোংলা) সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব ও করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবিরসহ বাঘ গননার কাজে বিশেষজ্ঞরা।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের বনের অভ্যন্তরে ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের সংখ্যা নির্ণয় করা হবে এবং সুন্দরবনে কতগুলো বাঘ রয়েছে তার সংখ্যা আগামী বছরের ২৯জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে ঘোষণা করা হবে।
এ তথ্য দিয়ে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ড. আবু নাসের মহাসিন হোসেন জানান, ২০১৩-১৪ইং সালে প্রথম সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ ও জরিপ কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালের সেই জরিপে ১০৬টি বাঘ সুন্দরবনে আছে বলে জানা যায়। এরপর ২০১৮ সালে জরিপ চালিয়ে ১১৪টি বাঘের তথ্য পাওয়া যায়। এখন বাঘের সেই সংখ্যা কমেছে, নাকি বেড়েছে তা জানতে নতুন করে রবিবার থেকে জরিপ চালানোর কাজ শুরু করা হয়েছে।
আগামী বছরের এপ্রিল মাসে এই জরিপ কাজ শেষ হবে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই ও শরনখোলা রেঞ্জে ৩০০টি ষ্টেশনের প্রতিটিতে দুইটি করে মোট ৬০০টি ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। পরে তা বিশ্লেষণ শেষে ২০২৪ সালের ২৯জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে বাঘের প্রকৃত সংখ্যা তুলে ধরা হবে। বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পে’র আওতায় বাঘ গননার কাজে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
ড. আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, সুন্দরবনে বাঘের শিকার প্রাণীর সংখ্যা বাড়ছে। গত বছর এর সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার। তাই সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়বে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
বনবিভাগ জানায়, বাঘ গননার বৈশ্বিক যে পদ্ধতি সেটা হলো ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতি। এর মাধ্যমে বাঘের ঘনত্ব নির্ণয় করে বাঘের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়।
বাংলাদেশেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করে ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটারের চার হাজার ৪০০ বর্গ কিলোমিটারে বাঘ গননার কাজ চালানো হবে। ক্যামেরার মাধ্যমে বাঘের মুখ মন্ডল ও ডোরা কাটার ছাপ উঠে আসবে। এটা জটিল একটা পরিসংখ্যান কাজ। এ কাজ করেই বাঘের সংখ্যা বের করা হবে।