নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ নাম তার নাসরিন সিকদার। অথচ নিজেকে বিভিন্ন জায়গায় শেখ মিলি হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। দেশের বাড়ি শরিয়তপুর জেলায় হলেও মাঝে মাঝে নিজেকে গোপালগঞ্জের মানুষ হিসাবে পরিচয় দেন তিনি।
রাজধানীর গুলশান এলাকায় একটি ফ্লাটে তিন ছেলে কে নিয়ে বসবাস করেন নাসরিন সিকদার ওরফে শেখ মিলি। তিনি সাধারণ মানুষের কাছে নিজেকে কখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিএস আবার কখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহেনার পিএস হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। আবার কখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস-২ গাজী লিকুর আত্নীয় হিসাবেও পরিচয় দিয়ে থাকেন। এমন অনেক প্রমান রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নাসরিন সিকদার ওরফে শেখ মিলি তৈরি করেছেন একটি প্রতারক চক্র। যে চক্রের প্রধান হিসাবে কাজ করছেন কুমিল্লার জয় নামে একটি লোক। সাধারণ মানুষকে চাকরি দেওয়া, সরকারী চাকুরিজীবীদের বদলি ও প্রমোশন দেওয়া থেকে শুরু করে এমন কোন কাজ নেই যা তিনি করেন না।
ওই প্রতারক চক্রের অন্যতম সদস্য জয় সাধারণ মানুষের সাথে মিশে তাদেরকে নিয়ে আসেন নাসরিন সিকদার ওরফে শেখ মিলির কাছে। এরপর শুরু হয় তাদের প্রতারনার কাজ। এমন অনেক মানুষ আছে যারা নাসরিন সিকদার ওরফে শেখ মিলির চক্রের কাছে সর্বশান্ত হয়ে এখন বিচারের দাবীতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
সম্প্রতি অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নাসরিন সিকদার ওরফে শেখ মিলির প্রতারনার কাহিনি। রাজধানীর মানিক নগর এলাকায় বসবাস করেন মুদি দোকানদার কাওসার মিয়া। কুমিল্লা এলাকায় বাড়ি হওয়ার সুবাধে পরিচয় হয় প্রতারক চক্রের সদস্য জয়ের সাথে। পরবর্তীতে প্রতারক জয় কাওসার আলীকে নিয়ে যায় নাসরিন সিকদার ওরফে শেখ মিলির কাছে। কাওসার আলীর সাথে ছেলে সম্পর্ক তৈরী করে এবং সাধারণ মানুষকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে কাওসারের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় প্রায় ৫২ লাখ টাকা। এরপর আর কাওসার আলীর সাথে কোন সম্পর্ক রাখেনি নাসরিন সিকদার ওরফে শেখ মিলি।
এ ব্যাপারে কাওসার আলীর সাথে কথা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, মানিকনগর এলাকায় আমার একটা মুদি দোকান ছিলো। সেখান থেকে জয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়। জয় আমাকে নাসরিন সিকদার ওরফে শেখ মিলির কাছে নিয়ে যায়। নাসরিন সিকদার ওরফে শেখ মিলি আমাকে ছেলে ডাকে এবং তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিএস পরিচয় দেন। আবার কখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহেনার পিএস হিসাবেও পরিচয় দেন। মাঝে মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস-২ গাজী লিকুর আত্নীয় হিসাবেও পরিচয় দেন। আমি তার কথা বিশ্বাস করি। তিনি তখন আমাকে লোক জোগাড় করতে বলেন চাকরি দেওয়ার জন্য। আমি তখন তার কথায় লোক যোগার করে দেই এবং টাকা পয়সা দেই।
এ সময় কাওসার আলী আরো বলেন, আমি নাসরিন সিকদার ওরফে শেখ মিলিকে চাকরির জন্য মেহেদি নামে একজনের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা, সিয়াম নামে একজনের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা, নুরুল ইসলাম নামে একজনের কাছ থেকে ৭ লাখ, আমি নিজে ২ লাখ টাকা, এছাড়াও নিশাদ নামে একজনের কাছ থেকে ১ লাখ, মোজাম ডাক্তার নামে একজনের কাছ থেকে ১ লাখ, কোরবান নামে একজনের কাছ থেকে ১ লাখ, সুশান্ত নামে একজনের কাছ থেকে ৮ লাখ, মনির নামে একজনের কাছ থেকে ২ লাখ, আক্তার নামে একজনের কাছ থেকে ১৩ লাখ, রাজ্জাক নামে একজনের কাছ থেকে ৩ লাখ, শামিম নামে একজনের কাছ থেকে ২ লাখ মোট ৫২ লাখ টাকা দেই।
কাওসার আলী আরো বলেন, নাসরিন সিকদার ওরফে শেখ মিলি এখন আর আমার ফোন রিসিভ করে না। আমি টাকার জন্য তার বাসায় গেলে তিনি আমাকে মারপিট করে তাড়িয়ে দেয়। এখন শুনছি তিনি আমাকে নাকি মেরে ফেলবে। তাই আমি বর্তমানে প্রাণ ভয়ে এবং পাওনাদারদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নাসরিন সিকদার ওরফে শেখ মিলির বিচার চাই।
এ ব্যাপারে নাসরিন সিকদার ওরফে শেখ মিলির ব্যবহৃত মোবাইল-০১৭৬৪-০*৫*৭* নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাওসার আলী আমার কাছে টাকা পাবে। যার কারনে আমি কাওসার আলীকে ১১ লাখ, ৫ লাখ, ৭ লাখ, ২ লাখ এবং ৩ লাখ টাকার মোট ৫ টি চেক দিয়েছি। তাছাড়া আমি খুব তাড়াতাড়ি কাওসার আলীর সাথে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলবো।
তিনি আরো বলেন, আমার বিরুদ্ধে নিউজ করবেন না। সমাজে আমার একটা মানসম্মান আছে। আমি আপনার সাথে অবশ্যই সাক্ষাত করবো। বলে ফোনটি কেটে দেন।
উল্লেখ, ইতিপুর্ব নাসরিন সিকদার ওরফে শেখ মিলি প্রতারনার অভিযোগে জেল খেটেছেন। জেল থেকে বেরিয়ে আবারো নতুন করে প্রতারনায় নেমেছেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি কেমন করে এমন প্রতারনা চালিয়ে যাচ্ছেন এমন প্রশ্ন অভিজ্ঞ মহলের।
(চলবে)