নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ সুশৃঙ্খল, মজবুত ও স্মার্ট সড়ক পরিবহন গড়ে তোলার লক্ষ্যে সেবা প্রদান করতে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন-বিআরটিসি। ২০২১ সালের পূর্বে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা ছিলো দুর্নীতিগ্রস্থ, ভঙ্গুর, জরাজীর্ণ, অবহেলিত, অন্ধকারে নিমজ্জিত এবং লোকসানে জর্জরিত। সেই বিআরটিসি এখন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের রুপ নিয়েছে।
বিআরটিসির বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম অর্ধশত বছরের সর্বদা লোকসানে চলতে থাকা অর্থাৎ প্রায় ডুবে যাওয়া বিআরটিসিকে পুনরুদ্ধারে সাহসী ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। অন্ধকারে নিমজ্জিত বিআরটিসিকে আলোর মুখ দেখাতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তিনি। স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ প্রদান অন্যতম, যা একই সাথে এটি বিআরটিসির গৃহীত অত্যন্ত যুগপোযোগী ও সাহসী পদক্ষেপ।
মোঃ তাজুল ইসলাম দুরদর্শীতার সাথে শক্ত হাতে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ফলশ্রুতিতে সংস্থাটি লাভের ধারা চলমান রয়েছে এবং পরিবহন সেবায় বিআরটিসি আইকনে পরিণত হয়েছে।
পূর্বে যেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় ৬ কোটি টাকা বেতন-ভাতা নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করা সম্ভব হতো না সেখানে বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলামের সুষ্ঠু ও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রায় ১২ কোটি টাকা বেতন-ভাতা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। এমনটাই জানালেন বিআরটিসি সংশ্লিষ্টরা।
নিয়োগপ্রাপ্ত কন্ডাক্টররা (কাউন্টারম্যান) জানিয়েছেন, স¤প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, গুটি কয়েক দুষ্কৃতিকারী (প্রভাষ চন্দ্র মন্ডল, নুর আলম, ইলিয়াস, আফতাব) সহ বিআরটিসির সাবেক ও বর্তমান কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রমকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তারা চেয়ারম্যানকে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বিভিন্ন ভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এবং লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে সদ্য স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগকৃত কন্ডাক্টর-ডি (কাউন্টারম্যান), পিওএল এটেন্ডেন্ট, বুকিং সহকারী ও পিওএল সহকারীদেরকে হয়রানি এবং হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
এমতাবস্থায়, তারা যদি এভাবে চলমান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকে রাষ্ট্রীয় একমাত্র সড়ক পরিবহন সংস্থার ক্ষতি সাধন করার চেষ্টা করেন তাহলে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত এবং পুরাতনদের সাথে নিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে দুষ্কৃতিকারীদের ষড়যন্ত্র কঠোর হাতে দমন করতে প্রস্তুত।
সাবেক স্বৈরাচার আওয়ামী প্রেতাত্মারা এখনো বিরাজমান এবং তারা এ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে প্রচেষ্টারত। এমনকি তারা নিত্য নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, যা বিআরটিসির অগ্রযাত্রাকে চরমভাবে ব্যাহত করছে। নিয়োগপ্রাপ্ত ১৮২ জনের মধ্যে প্রায় সকলেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের সাথে জড়িত ছিলেন।
বিআরটিসির কর্মীরা বলেন, কন্ডাক্টার-ডি কাউন্টারম্যান পোস্টটি ১৮তম গ্রেড হওয়া স্বত্তেও এই পোস্টটি বিআরটিসির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই পদে নিয়োগ প্রাপ্তরা সরাসরি অপারেশনে নিয়োজিত থেকে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে বিআরটিসিকে সচল রাখে, যা ছাত্র-জনতার বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রগামী ভুমিকা রাখবে।
ইতোপূর্বে ৩৩ জন কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমান চেয়ারম্যানের নিজ জেলার কোনো প্রার্থী নিয়োগ পাননি। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভাবে সুসম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বিআরটিসিতে ডেপুটেশনে আসা কর্মরত সেনাবাহিনী যথেষ্ট ইতিবাচক ভুমিকা পালন করেন। ফলে বর্তমান বিআরটিসির হাত শক্তিশালী হয়।
সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত কন্ডাক্টরগণ (কাউন্টারম্যান) আরো বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বিআরটিসির সার্বিক কল্যাণে সর্বদা সকল পরিস্থিতিতে সেবা দানে আমরা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। দৃঢ় সংকল্প এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বৈষম্যহীন, সমৃদ্ধশালী ও নির্ভেজাল বিআরটিসির উন্নয়ন কোনো অপশক্তি ব্যাহত করতে চাইলে, ষড়যন্ত্রকারীদের বলতে চাই সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে বিআরটিসিতে চাকরি পেয়েছি। আমরা নিজেরা সৎ, পরিশ্রমী ও নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বিআরটিসিকে আরো এক ধাপ সামনে এগিয়ে নিতে চাই এবং আমরা নতুন প্রজন্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সম্মুখে থাকা প্রত্যেকে সম্মিলিত ভাবে ষড়যন্ত্রকারীদের নিজ থেকে সংশোধন হওয়ার আহবান জানাই।
এদিকে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি’র) প্রধান কার্যালয়ের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে গত বৃহস্পতিবার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সিপিএফ, গ্র্যাচুইটি ও ছুটি নগদায়নের অর্থ প্রদান করা হয়েছে। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ ২০২১ সাল থেকে তিন মাস অন্তর অন্তর অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সিপিএফ, গ্র্যাচুইটি ও ছুটি নগদায়নের অর্থ প্রদান করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২৯৬ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সিপিএফ, গ্র্যাচুইটি ও ছুটি নগদায়ন বাবদ সাড়ে চার কোটি টাকারও বেশি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও অসুস্থ ও দুরারোগ্য আক্রান্ত ৫৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে কল্যাণ তহবিল হতে ২১ লাখ ৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ২০২১ সালের পূর্বে নতুন গাড়ি থাকা সত্তেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছয় কোটি টাকা বেতন নিয়মিত পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং প্রশাসনের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় পুরাতন গাড়ি দিয়ে রাজস্ব অর্জন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা বেতন প্রদানের পাশাপাশি সিপিএফ, গ্র্যাচুইটি ও ছুটি নগদায়নের অর্থ নিয়মিত পরিশোধ করা হচ্ছে। এছাড়া সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে বিআরটিসিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।