নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গুলোর অবসর প্রাপ্তদের গ্রাচ্যুইটিসহ সমুদয় পাওনা পেতে করতে হয় না আবেদন, দিতে হয় না ঘুষ। এমনকি প্রধান কার্যালয়ে ঘুরে হতে হয় না হয়রানির শিকার। না চাইতেই মিলছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন-বিআরটিসির অবসরপ্রাপ্ত জনবলের বকেয়া পাওনা। অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এত সহজে তাদের চাকরিকালীন পাওনা বুঝে পাবেন এ যেন আকাশ কুসুম স্বপ্ন। আর এ স্বপ্নের বাস্তবে রূপ দিয়েছে বিআরটিসির বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম।
পাওনা বুঝে দিতে গেল সাড়ে তিন বছর ধরে নীতিমালা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই নীতিমালা অনুযায়ি প্রতি ৩ মাস পরপর ন্যায্যতা ও অর্থ সংস্থানের ভিত্তিতে অবসর প্রাপ্তদের ব্যাংকে প্রদান করা হচ্ছে বকেয়া টাকা। বকেয়া টাকার আনুপাতিক হার বিবেচনায় নির্ধারণ করা হয়, কে পাবে কত টাকা। গেল সাড়ে তিন বছরে চার শতাধিক জনবলের টাকা পরিশোধ করেছে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ।
বিআরটিসি সূত্র জানায়, বিআরটিসির অবসরপ্রাপ্ত ২৯৪ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এভাবে প্রতি তিন মাস পরপর দেওয়া হয় প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত। আর এ জন্য ঘুষ গুনতে হয় না এক টাকাও, হতে হয় না কোন হয়রানীর শিকার।
বিআরটিসির অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, বিআরটিসির বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম স্যারের কারনে গেল সাড়ে তিন বছরে তারা তাদের জমাকৃত টাকার সমপরিমানের দ্বিগুণ টাকা অর্থ্যাৎ সিপি ফান্ড ও গ্রাচ্যুইটির বকেয়ার পেতে ঘুষ দিতে হয়নি। হতে হয়নি হয়রানীর শিকার। তবে তাদের অভিযোগ, পূর্বে এই টাকা নিতে কর্মকর্তারাই প্রস্তাব দিত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা ঘুষ দিলে টাকা মিলবে সহজে। অবসরপ্রাপ্ত জনবলের বকেয়া পরিশোধের জন্য টাকা আনা হতো অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে। এসব টাকার তিন ভাগের এক ভাগ চলে যেত তৎকালীন কর্মকর্তা ও দালালদের পকেটে। ঘুষ ছাড়া নড়তো না ফাইল, অনুমোদনের জন্য ফেলে রাখা হতো ২ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত। বর্তমানে তার উল্টো। ফাইলের অনুমোদন মিলছে সর্বোচ্চ ৭ দিনের ভেতর।
অবসরপ্রাপ্ত গাড়ি চালক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোহাম্মাদ আলী বলেন, আমাদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম স্যারের কারনে আমরা কোন হয়রানি ছাড়াই গ্রাচ্যুইটিসহ অন্যান্য পাওনাদী পাচ্ছি। পাওনা বুঝে পেতে আবেদনও করিনি। টাকা নিতে বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়েও যেতে হয় না। ব্যাংকে টাকা পেয়ে যাই। এ কারনে চেয়ারম্যান স্যারের জন্য নফল রোজা করে শুকরিয়া আদায় করেছি।
বাস কন্টাক্টর হিসেবে অবসরে যাওয়া নোয়াখালীর রুহুল আমিন বলেন, আমাদের বর্তমান চেয়ারম্যান স্যারের কারনে আমি আমার পাওনার ২৭ লাখের ১৯ লাখ টাকা বুঝে পেয়েছি। আমার ফাইল মাত্র ৭ দিনে অনুমোদন হয়েছে। আমি বিআরটিসির চেয়ারম্যান স্যারের জন্য দোয়া করি। প্রতি তিনমাস পর পর আমাদের পাওনা আমাদের ব্যাংকে ঢুকে যাচ্ছে। আগে আমাদের অবসরে গিয়ে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে হতো। এখন পাওনা টাকা সহজে বুঝে পেয়ে ভাল আছি।
বিআরটিসি সূত্র বলছে, গেল সাড়ে ৩ বছরে গ্রাচ্যুইটির ৩৪৯ জন, সিপি পরিশোধ করা হয়েছে ৩৩৯ জনের ও ছুটি নগদায়ন বাবদ ৬২ জনকে দেওয়া হয়েছে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা। যার পুরোটাই অর্থায়ন হয়েছে বিআরটিসির নিজস্ব তহবিল থেকে। এই অর্থের যোগান আসছে প্রতিষ্ঠানটির গাড়ি পরিচালনা করে প্রাপ্ত আয় থেকে। নতুন গাড়ি থাকা সত্ত্বেও সাড়ে ৩ বছর পূর্বেও প্রতিষ্ঠানটির মাসিক বেতন বাবদ ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি, বর্তমানে পুরাতন গাড়ি পরিচালনা করে বিআরটিসি থেকে এখন প্রতিমাসে ১২ কোটি টাকা বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিআরটিসির উপ-সচিব অর্থ বিভাগের দায়িত্ব পালন করা জেনারেল ম্যানেজার মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, আমাদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম স্যারের নির্দেশনায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করায় এটা সম্ভব হয়েছে। আর্থিক ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতার ফলে আয় বৃদ্ধি এবং ব্যয় সংকোচনের ফলে নিট মুনাফা বেড়েছে। সকল স্তরে দুর্নীতি বন্ধের ফলে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বিআরটিসি। এই অর্থ থেকে থেকে সকল দায় পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে।