নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় যুবলীগ নেতা হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কোন ভাবেই থামছে না তার চাঁদাবাজি। মতিঝিল এলাকার বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চালিয়ে যাচ্ছে তার চাঁদাবাজি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলায় বাড়ি হওয়ার সুবাধে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাকালিন সময়ে সে যুবলীগের কর্মী হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিতো। যুবলীগের পরিচয় দিয়ে মতিঝিল এলাকায় বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডাব্লিটিসি, শিল্প মন্ত্রণালয়, রাজউক, বিআরটিসি, বিসিআইসি, জীবনবীমাসহ মতিঝিলে অবস্থিত বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী অফিসে চাঁদবাজি করে বেড়াতো।
৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলে ঢাকা থেকে পালিয়ে যায় হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান। কিছু দিন আত্নগোপনে থেকে আবারো ফিরে আসে ঢাকায়। নতুন করে শুরু করেছে তার চাঁদাবাজি। হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান বর্তমানে বিভিন্ন অফিসে গিয়ে অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সেনাবাহিনীর কয়েকজন আত্নীয়র পরিচয়ে নতুন করে শুরু করেছে তার সেই পুরাতন পেশা চাঁদাবাজি।
একাধিক সুত্রে জানা যায়, যুবলীগ নেতা হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান নিজেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকজন বড় কর্মকর্তার আত্নীয় পরিচয় দিয়ে এবং তাদের বিভিন্ন ছবি প্রদর্শন করে। সেনাবাহিনীর কাছে বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে অভিযোগ দিবে বলে ভয় দেখিয়ে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না পেলে তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী দিয়ে ব্যবস্থা নিবে বলেও হুমকি ধামকি দেয়। হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মতিঝিল এলাকার বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কে এই হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসানঃ গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার সাজাইল ইউনিয়নের ভট্রোই থোবা গ্রামের মোঃ আব্দুল মান্নানের বড় ছেলে হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান। ছোটবেলা থেকে গ্রামে ছিচকে চুরি থেকে শুরু হয় তার জীবন। অভাবের সংসারে বাবা আব্দুল মান্নানকে সংসার চালাতে সহযোগিতা করার জন্য এলাকায় ছিচকে চুরি শুরু করে হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান। কয়েকদফা ধরা পড়ার পর এলাকাবাসীর চাপে সে চলে আসে ঢাকায়। ঢাকায় আসার পর প্রথমে গুলিস্তান লেগুনা স্টান্ডে চা টানার কাজ পায় হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান। পরবর্তীতে স্থানীয় কয়েকজন নেতার আর্শীবাদে লেগুনা থেকে চাঁদা তোলা শুরু হয় হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান ।
লেগুনা স্টান্ডে থাকাকালিন সময়ে হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসানের সাথে পরিচয় হয় মতিঝিল এলাকার সন্ত্রাসী বোম ফারুকের সাথে। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসানকে। বোম ফারুকের সহযোগিতায় হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান আস্তানা গড়ে তুলে মতিঝিল এলাকায়। বোম ফারুকের সহযোগিতায় মতিঝিল এলাকার বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি অফিসে যুবলীগের সদস্য পরিচয়ে বেপরোয়া ভাবে চাঁদাবাজি শুরু করে হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান। সেই সাথে বোম ফারকের সহযোগিতায় একটি টোকাই বাহিনী গড়ে তোলে হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান। হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসানের বাহিনী রাতের আধাঁরে শুরু করে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম। যুবলীগ নেতা পরিচয়ে থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান তার টোকাই বাহিনী দিয়ে একের পর এক অপকর্ম করতে থাকে। হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে পল্টন, মতিঝিল থানাসহ বেশ কয়েকটি থানায় জিডি ও মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ার সুবাধে গুলিস্তান আওয়ামী লীগের অফিসে যাতায়াত শুরু করে হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান। কয়েকজন যুবলীগের নেতার সাথে পরিচয়ের সুত্র ধরে নিজেই বনে যান যুবলীগ নেতা। তখন থেকেই হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিতে শুরু করেন। আর যুবলীগ নেতার পরিচয়েই মতিঝিল এলাকায় শুরু করে তার চাঁদাবাজি।
আওয়ামী লীগের পতনের কিছু দিন আগে
হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান পুরান ঢাকায় জনৈক এক ব্যাক্তির ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে টোকাই বাহিনী নিয়ে চাঁদা দাবী করেন। সে সময় ওই ব্যাবসায়ী চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান তার টোকাই বাহিনী দিয়ে ওই ব্যাবসায়ীর উপর হামলা চালায়। হামলায় ব্যবসায়ী গুরুতর জখম হয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন।পরবর্তী ওই ব্যাবসায়ী বংশাল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় প্রায় ২ মাস জেল হাজতে খাটে হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে।
বর্তমানে হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান মতিঝিল এলাকার কয়েকটি অফিসের বড় কর্মকর্তাদের কাছে চাঁদা দাবী করেছে। চাঁদার টাকা না পেলে সে সেনাবাহিনীর কাছে তাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিবে বলেও হুমকি অব্যহত রেখেছে। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দাখিলসহ বিভিন্ন পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করবে বলেও হুমকি দিচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মতিঝিল এলাকার বিভিন্ন অফিসের বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান একজন ধুরন্ধর মানুষ। কি ভাবে মানুষকে বিপদে ফেলতে হয় সেটা সে ভালো করে জানে। সে কখনো সেনাবাহিনীর অফিসারের আত্নীয়, কখনো দুদক কর্মকর্তার আত্নীয় আবার কখনো বড় পুলিশ কর্মকর্তার আত্নীয় পরিচয় দিয়ে থাকে। সে একজন ভন্ড ও প্রতারক। মানুষকে কি ভাবে মিথ্যা ঝামেলায় ফেলতে হয় এ ব্যাপারে সে খুব পটু।
তারা আরো বলেন, হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসান। আওয়ামী লীগের পতনের পর বেশ কিছু দিন ঢাকা থেকে পালিয়ে আত্নগোপনে ছিলো। আবারো সে ঢাকায় ফিরে তার চাঁদাবাজি কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়াও সে তার ফেসবুক আইডিতে বর্তমান সরকার বিরোধী লেখা ও ছবি পোস্ট করছে। যা তার ফেসবুক আইডি দেখলে বোঝা যাবে। আমরা হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসানের হাত থেকে বাঁচতে চাই। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
যুবলীগের নেতা পরিচয় দানকারী হাসান ওরফে মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি), বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ডিজিএফআই, এনএসআইসহ সকল গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভুক্তভোগী মহলসহ সাধারণ মানুষ।