নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ এবার ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের খোলস পাল্টে বিএনপি হওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) ডিজিএম মনিরুজ্জামান বাবু। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে বিআরটিসিতে কর্মরত আওয়ামী লীগ পন্থীদেরকে নানা ভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে চলছেন তিনি।
ব্যাপক তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা জেলার দোহার উপজেলায় তার বাড়ি হওয়ার কারনে এবং এক সময় সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা নাজমুল হুদার খুব কাছের লোক ও ছাত্রদলের কর্মী হওয়ার সুবাধে নাজমুল হুদার মাধ্যমে বিআরটিসিতে চাকুরি নেন তিনি। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভোল পাল্টে তিনি হয়ে যান আওয়ামীলীগের খোদ লোক।
দোহার-নবাবগঞ্জের এমপি ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার উপদেষ্টা দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমানের হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন তিনি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর আবারো বিএনপির নেতা হওয়ার জন্য বর্তমানে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি বিআরটিসিতে কর্মরত আওয়ামী পন্থীদেরকে নানা ভাবে হেনস্তা করছেন। নিজেকে বিএনপির লোক লোক সাজানোর জন্য।
কে এই মনিরুজ্জামান বাবুঃ বিআরটিসির কলংঙ্ক। ডিজিএম মনিরুজ্জামান বাবু প্রথমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন। বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনে ডিউটিরত অবস্থায় এক নারীকে ধর্ষনের দায়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে তার চাকুরী হারান।
পরবর্তীতে ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদার কৃপা লাভ করেন। সেই কৃপায় চাকুরীচুত্য মনিরুজ্জামান বাবুকে নাজমুল হুদা বিআরটিসিতে চাকুরী দেন। বিআরটিসিতে যোগদানের পর পরই বিভিন্ন সুন্দরী নারীদের দিয়ে যখনই যে চেয়ারম্যান যোগদান করতেন তাদের মনোরঞ্জন করাতেন এবং গোপনে ভিডিও ধারণ করে প্রত্যেক চেয়ারম্যান কে নাকে খদদিয়ে ঘোরানোর পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছেন মনিরুজ্জামান বাবু।
বিআরটিসির মতিঝিল ডিপোতে ইউনিট প্রধান হিসাবে যোগদানের পর ময়না নামে এক মহিলার মেয়েকে গর্ভবতী করেন বাবু। এরপর চালক আবুল কাশেমের সুন্দরী স্ত্রী ঝর্ণার সাথে রয়েছে তার অবৈধ সম্পর্ক। তাকে নিয়ে অপকর্ম করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। মনিরুজ্জামান বাবু যে ডিপোতে যখনই যোগদান করেন সেই ডিপোর ধবংস অনিবার্য। কোন চেয়ারম্যানই তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্হা নেওয়ার সাহস পায়নি। এক মাত্র বিআরটিসির সাবেক চেয়ারম্যান এহসান এলাহী চেয়ারম্যান কে এই রাস্তায় নামাতে পারেননি মনিরুজ্জামান বাবু। তার এ সকল কু কর্মের জন্য এহসান এলাহী বরিশালে বদলী করেন মনিরুজ্জামান বাবুকে। সেখানেও অনৈতিক কাজে ধরা পড়েন বাবু। শুধু নারী আর টাকার জোরে ডিজিএম হয়েছেন। অনেক সিনিয়র যোগ্য ব্যক্তিরা ডিজিএম হতে পারেনি। ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম হয়েছেন তিনি।
মনিরুজ্জামান বাবু যখন যা চান তখন তাই করতে বাধ্য হন চেয়ারম্যানগন। কারন তার কথা না শুনলে তিনি তাদেরকে বিপদে ফেলেন। এই দূর্নীতিবাজ মুখোশধারী চরিত্রহীন কর্মকর্তাকে কেন বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না এ নিয়ে বিআরটিসিতে রয়েছে নানা গুঞ্জন।
সাবেক বিএনপি নেতা নাজমুল হুদার হাত ধরে বিআরটিসিতে চাকুরি নেয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠে বাবু। এমন কোন হেন কাজ নেই যা তিনি করেন না।
বিআরটিসি বরিশাল বাস ডিপোর ম্যানেজার থাকা কালীন সময়ে জনৈক এক নারীকে নিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ডের সময় জনতার হাতে ধরা পড়েন মনিরুজ্জামান বাবু। ওই সময় স্থানীয় লোকজন তাকে জনৈক নারীসহ আটক করে। পরবর্তীতে বাবুকে স্থানীয় লোকজন বিবস্ত্র (উলঙ্গ) করে তার সারা গায়ে মিষ্টির শিরা ঢেলে দেয়। পরবর্তীতে মোটা অংকের টাকা দিয়ে মনিরুজ্জামান বাবু সে যাত্রা বেঁচে গেলেও বরিশালের মানুষ তাকে এখনো শিরা বাবু নামেই চিনে বা তিনি বরিশালের মানুষের কাছে শিরা বাবু নামে অধিক পরিচিত ও জনপ্রিয়।
মনিরুজ্জামান বাবু বিআরটিসি চট্টগ্রাম বাস ডিপোতে ম্যানেজার থাকাকালীন সময়ে অফিস কক্ষে জনৈক এক নারীকে নিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ডের সময় একজন ওয়ার্ড কমিশনার, সাধারন জনতা ও বিআরটিসির কর্মচারীদের হাতে ধরা পড়েন। এ সময় তাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। সে যাত্রায়ও বাবু মোটা অংকের টাকা দিয়ে রেহাই পেয়ে যান। চট্টগ্রামের লোকজন তখন তাকে মাগীবাজ বাবু হিসাবে আখ্যায়িত করে।
এছাড়াও মনিরুজ্জামান বাবু বিআরটিসি পাবনা ও বগুড়া বাস ডিপোতে ম্যানেজার থাকাকালীন সময়ে সেখানেও নারী ঘটিত ব্যাপারে জড়িয়ে যান তিনি। নারী ঘটিত একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে তাকে প্রত্যাহার করে আনে বিআরটিসির উর্ধতন কতৃপক্ষ।
সম্প্রতি বিআরটিসির নারায়নগঞ্জ বাস ডিপোতে ম্যানেজার থাকাকালীন সময়ে নারী কেলেংকারী ও সাধারণ কর্মচারীদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করার কারনে তার বিরুদ্ধে সাধারণ শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। সে আন্দোলন চরম আকার ধারন করলে বিআরটিসির উর্ধতন কতৃপক্ষ তাকে সেখান থেকেও প্রত্যাহার করে নেয়। পরবর্তীতে তাকে বিআরটিসির যাত্রাবাড়ি বাস ডিপোর দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি বিআরটিসির পাবনা ডিপোতে পোষ্টিং নেন। বর্তমানে তিনি পাবনা ডিপোতে কর্মরত আছেন।
বিআরটিসির একাধিক সুত্রে জানা যায়, শুধু নারী কেলেংকারী নয় মনিরুজ্জামান বাবু বিআরটিসির বিভিন্ন বাস ডিপোতে ম্যানেজার থাকাকালীন সময়ে সরকারি রাজস্বের টাকাও আত্মসাৎ করেছেন। সাধারণ শ্রমিকদের অনুপস্থিত দেখিয়ে তাদের বেতন ভাতাদি কর্তন করে নিজেই আত্মসাৎ করেছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও মনিরুজ্জামান বাবু নিজেকে বিআরটিসির সাবেক চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম সাহেবের খাস লোক হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকতেন। জনশ্রুতি রয়েছে মনিরুজ্জামান বাবু যা বলেন সেটাই নাকি করে থাকতেন বিআরটিসির সাবেক চেয়ারম্যন তাজুল ইসলাম। বিআরটিসির সাবেক চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম নাকি বাবুর কথার বাইরে কখনো যাননি। এমনটাই সব সময় বলে বেড়ান ডিজিএম মনিরুজ্জামান বাবু।
মনিরুজ্জামান বাবু কিছু দিন পুর্বে বিআরটিসি যাত্রাবাড়ি বাস ডিপোর ম্যানেজার মাসুদ তালুকদারের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের লোকজনকে ডিপোতে ঢুকিয়ে বিভিন্ন অশ্লীল শ্লোগান দেওয়ায় এবং মাসুদ তালুকদারের অপসারনের জন্য তাদেরকে দিয়ে বাস ডিপোর ভেতরে বিক্ষোভ চালায়।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিআরটিসির সাবেক চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের অপসারনের ব্যাপারে জনৈক এক মিডিয়াকর্মীর সাথে ফোনে আলাপ করেন মনিরুজ্জামান বাবু। তার সে ফোন আলাপ এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
বিআরটিসির সাবেক চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের খোদ লোক হিসাবে পরিচয় দিয়ে আবার তার অপসারন চাওয়ায় হতবাগ প্রকাশ করেছিলো বিআরটিসির সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
একটি সুত্র জানায় বিআরটিসির সাবেক চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম সচিব হিসাবে পদোন্নতির কয়েকদিন আগে নাকি মনিরুজ্জামান বাবু তাকে নগত ১৫ লাখ টাকা উৎকোচ দিয়ে পাবনা বাস ডিপোতে পোষ্টিং নেন। বর্তমানে মনিরুজ্জামান বাবু বিআরটিসির পাবনা বাস ডিপোতে ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত আছেন।
একটি সুত্র জানায়, ডিজিএম মনিরুজ্জামান বাবুর বিরুদ্ধে আবারো ফুঁসে উঠতে শুরু করেছে বিআরটিসির সাধারন কর্মচারীরা। আবারো মনিরুজ্জামান বাবুর বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্দোলন হতে পারে এমনটাই আশংকা করছেন বিআরটিসির অনেকেই।
অপরদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিসির কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, বিআরটিসিতে সদ্য যোগদানকৃত চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ মোল্লাকে তিনি নিজের আয়ত্বে আনার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। বিআরটিসিতে সদ্য যোগদানকৃত চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ মোল্লা কে সে নাকি ছবেবলে, কলাকৌশলে তার আয়ত্বে নিয়ে আসবে। এমনটাই তিনি বলে বেড়িয়েছেন কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে।
এ ব্যাপারে বিআরটিসির ডিজিএম মনিরুজ্জামান বাবুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকল ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা। তিনি এই প্রতিনিধিকে চায়ের দাওয়াত দিয়ে ফোনটি কেটে দেন।
বিআরটিসির ডিজিএম মনিরুজ্জামান বাবুর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা, সড়ক উপদেষ্টা, সড়ক বিভাগের সচিবসহ বিআরটিসি বর্তমান চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানিয়েছেন বিআরটিসির সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।